কাদেরিয়া তরিকা
ইসলাম |
---|
বিষয়ক ধারাবাহিক নিবন্ধের অংশ |
সংক্ষেপে | কাদেরী |
---|---|
গঠিত | দ্বাদশ শতাব্দী |
ধরন | সুফি তরিকা |
সদরদপ্তর | গিলান, ইরান |
মূল ব্যক্তিত্ব | আব্দুল কাদের জিলানী |
সুফিবাদ এবং তরিকা |
---|
প্রবেশদ্বার |
কাদেরিয়া (আরবি: القادريه) হল একটি সুফি তরিকা। আবদুল কাদের জিলানির নাম থেকে এই তরিকার নামকরণ করা হয়েছে। এর বেশ কিছু শাখা রয়েছে। আরবভাষী অঞ্চলসহ তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, বলকান, ফিলিস্তিন, চীন,[১] পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকাতে এর বিস্তার রয়েছে।[২] তরিকাটি সুন্নি ইসলামী আইনের মৌলিক বিষয়গুলি মেনে চলার উপর দৃঢ়ভাবে নির্ভর করে থাকে বলে জানা গেছে।
আধ্যাত্মিক ধারা
[সম্পাদনা]আধ্যাত্মিক ধারার (সিলসিলা) তালিকাভুক্ত নিম্নরূপ:
- হযরত মুহাম্মদ (দ.)
- আলী
- হাসান ইবনে আলী
- হোসাইন ইবনে আলী
- আলী ইবনে হোসেন জয়নুল আবিদীন
- মুহম্মদ আল-বাকির
- জাফর আস-সাদিক
- মুসা আল-কাজিম
- আলী আর-রিদা
- মারূ’ফ কারখী
- ছিররিউ সাকতী
- জুনাইদ বাগদাদী
- আবু বকর শিবলী
- আবুল ফজল আবদুল ওয়াহিদ আত-তামিমী
- মোহাম্মদ ইউসুফ আবু আল-ফারাহ তারতুসী
- আবুল হাসান হানকারি
- আবু সাঈদ মুবারক মাখযুমী
- আবদুল কাদের জিলানী
ইতিহাস
[সম্পাদনা]কাদিরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা আবদুল কাদির জিলানি ছিলেন একজন আলেম ও ধর্মপ্রচারক। [৩] আবু সাঈদ আল-মুবারকের মাদ্রাসায় তিনি পড়াশোনা করেন। তিনি ১১১৯ সালে আল-মুবারকের মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হন। নতুন শেখ হওয়ার পর, তিনি এবং তার বৃহৎ পরিবার ১১৬৬ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাদ্রাসায় বসবাস করেছিলেন। আব্দুল কাদেরের মৃত্যুর পর তার পুত্র আব্দুল রাজ্জাক নিজের পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। আব্দুর রাজ্জাক একটি স্বতন্ত্র এবং মর্যাদাপূর্ণ সুফি ধারার প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে নিজের পিতার জীবনী সকলের সামনে তুলে ধরেন। [৪]
১২৫৮ সালে বাগদাদের বিরুদ্ধে মঙ্গোলীয়দের বিজয়ের পরেও কাদিরিয়া তরিকা উন্নতি লাভ করতে থাকে এবং একটি প্রভাবশালী সুন্নি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। আব্বাসীয় খিলাফতের পতনের পর, গিলানির কিংবদন্তি জীবনী আবদুল-কাদিরের রহস্যময় ক্রিয়াকলাপ (বাহজাত আল-আসরার ফি বাদ মানাকিব 'আব্দ আল-কাদির ) শিরোনামের একটি পাঠ্যের মাধ্যমে আরও ছড়িয়ে পড়ে। নুর আল-দিন 'আলি আল-শাতানুফি, গিলানিকে 'ঐশ্বরিক অনুগ্রহের চূড়ান্ত স্তরে উন্নীত' হিসাবে চিত্রিত করেছিলেন [৪] এবং কাদিরি তরিকাকে বাগদাদের অঞ্চলের বাইরেও ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছিলেন। [৪]
পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে, কাদিরিয়ার স্বতন্ত্র শাখা গড়ে উঠে এবং এটি মরক্কোতে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া স্পেন, তুরস্ক, ভারত, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া এবং বর্তমান মালিতেও এ তরিকা প্রসিদ্ধ হতে থাকে। [৪] ১৫৩৪ সালে অটোমান সাম্রাজ্য বাগদাদ জয় করার অল্প সময়ের মধ্যেই, সুলতান সুলাইমান আবদুল-কাদির গিলানির সমাধিতে একটি গম্বুজ নির্মাণের নির্দেশ দেন এবং কাদিরিয়াকে ইরাকে তার প্রধান সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
খাজা আব্দুল-আল্লাহ (কাদিরিয়ার একজন শেখ এবং ইসলামের নবী মুহাম্মদের একজন বংশধর) ১৬৭৪ সালে কাদেরিয়া তরিকা প্রচারের জন্য চীনে গিয়েছিলেন এবং তিনি ১৬৮৯ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ তরিকা প্রচারের জন্য বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছিলেন বলে জানা যায়। [৪] [৫] আবদুল্লাহ-এর ছাত্রদের মধ্যে একজন, কিউই জিঙ্গি হিলাল আল-দিন, চীনে স্থায়ীভাবে কাদিরি সুফিবাদের শিকড় গেড়েছিলেন বলে জানা যায়। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যে কাদিরিয়া ইউরোপের অটোমান শাসিত অঞ্চলগুলোতে পৌঁছে যায়।
পশ্চিম ভারতে কাদিরিয়ার প্রসারে সুলতান বাহু অবদান রেখেছিলেন। তিনি নিজের লেখার মাধ্যমে এ তরিকাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। [৬] তিনি যিকিরের পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছিলেন এবং জোর দিয়েছিলেন যে সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌঁছানোর উপায় তপস্বী বা অত্যধিক বা দীর্ঘ প্রার্থনার মাধ্যমে নয় বরং সৃষ্টিকর্তাকে নিঃস্বার্থে ভালবাসার মাধ্যমে অর্জিত হয়, একে তিনি ফানা বলে অভিহিত করেন।
কাদেরিয়া তরিকা থেকে সৃষ্ট তরিকাসমূহ
[সম্পাদনা]সরওয়ারী কাদেরিয়া
[সম্পাদনা]কাদিরিয়া সুলতানিয়া নামেও পরিচিত এই তরিকাটি সতেরো শতকে সুলতান বাহু প্রতিষ্ঠা করেন এবং এটি ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মূলত কাদিরিয়া তরিকাতের পন্থা অনুসরণ করে। তবে, এটি নির্দিষ্ট কোনো পোশাক বিধি অনুসরণ করে না বা একাকীত্বে দীর্ঘ সময় কাটানোর মতো কঠোর সাধনাও প্রয়োজন হয় না। এর মূল দর্শন হলো আল্লাহর প্রতি প্রেমময় ভক্তির চর্চা।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- Abun-Nasr, Jamil M. "The Special Sufi Paths (Taqiras)." Muslim Communities of Grace: The Sufi Brotherhoods in Islamic Religious Life. New York: Columbia UP, 2007. 86-96.
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Gladney, Dru. "Muslim Tombs and Ethnic Folklore: Charters for Hui Identity"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Journal of Asian Studies, August 1987, Vol. 46 (3): 495-532; pp. 48-49 in the PDF file.
- ↑ Abun-Nasr, Jamil M. "The Special Sufi Paths (Taqiras)." Muslim Communities of Grace: The Sufi Brotherhoods in Islamic Religious Life. New York: Columbia UP, 2007. 86-96.
- ↑ Omer Tarin, Hazrat Ghaus e Azam Shaykh Abdul Qadir Jilani sahib, RA: Aqeedat o Salam, Urdu monograph, Lahore, 1996
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Tarin
- ↑ Jonathan Neaman Lipman (১ জুলাই ১৯৯৮)। Familiar strangers: a history of Muslims in Northwest China। University of Washington Press। পৃষ্ঠা 88–। আইএসবিএন 978-0-295-80055-4।
- ↑ Cuthbert, Mercy (২০২২-০৬-১৪)। "Qadiriyya Tariqa | Founder, History, Beliefs and More"। World Religions (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-০৫।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Ashrafesimna Academy
- Biography[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Qadiriyya-Muhammadiyya Tariqa - International Qadiriyya Foundation
- Qadri Sarwari Tariqa - Hazrat Sultan Bahu
- Sulthaniya Foundation
- TAQWA.sg - Tariqatu-l Arusiyyatu-l Qadiriyya Worldwide Association (Singapore)
- https://web.archive.org/web/20150505073321/http://sulthaniyaonline.com/Sulthan_Shah_biography.php
- Qadiriyya Sufi in China