Jump to ratings and reviews
Rate this book

অসমাপ্ত আত্মজীবনী

Rate this book
২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে।বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।

328 pages, Hardcover

First published January 1, 2012

Loading interface...
Loading interface...

About the author

Sheikh Mujibur Rahman

9 books116 followers
Sheikh Mujibur Rahman (Bengali: শেখ মুজিবুর রহমান Shekh Mujibur Rôhman‎), (March 17, 1920 – August 15, 1975) was a Bengali politician and statesman who was the founding leader of the People's Republic of Bangladesh. He headed the Awami League and served as the first President of Bangladesh, and later as Prime Minister. He is popularly referred to as Sheikh Mujib (shortened as Mujib or Mujibur, not Rahman), with the honorary title of Bangabandhu (বঙ্গবন্ধু Bôngobondhu, "Friend of Bengal"), and widely revered in Bangladesh as the founding father of the nation. He was assassinated by a group of junior army officers on August 15, 1975, along with most of his family, while acting as President of Bangladesh.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
682 (52%)
4 stars
400 (30%)
3 stars
126 (9%)
2 stars
47 (3%)
1 star
38 (2%)
Displaying 1 - 30 of 140 reviews
Profile Image for Shanto.
45 reviews20 followers
April 21, 2015
তিনি রাজনীতির মানুষ, লেখক নন। শব্দ আর বাক্যের ব্যবহারে, ভাষা আর অলংকারে, উপমা আর রূপকের কারুকার্যে মন ভোলানো লেখনি তাঁর ছিল না। কিন্তু তারপরেও মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে হয়। সহজ মানুষের সহজ বাক্য, সহজ শব্দ, সহজ ভাষা, হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা, ঠিক তাঁর ভাষণগুলোর মতোই। বন্ধুবান্ধব আর স্ত্রীর অনুরোধে জেলখানার বসে তিনি লিখতে শুরু করেছিলেন তাঁর অসমাপ্ত জীবনের অসমাপ্ত গল্প। বইয়ের একেবারে শুরুতেই সরল স্বীকারোক্তি, ‌‌"লিখতে যে পারি না; আর এমন কী করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।"

‘শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি অতি পুরানো, পাতাগুলি জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান খাতাগুলি পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি।’ বইটিকে ফ্ল্যাপে এভাবেই পরিচিত করে দেয়া হয়েছে। লেখক যখন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তখন এর চেয়ে অধিক ভূমিকার আর কী প্রয়োজন থাকতে পারে!

বইটা শেষ করতে হলো বেশ ভালো রকমের অতৃপ্তি নিয়ে। অতৃপ্তির কারণ আসলে নামেই বোঝা যায় - অসমাপ্ত আত্মজীবনী। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া, কোনো উপসংহার ছাড়া, লেখকের অসমাপ্ত জীবনের মতোই একেবারেই হুট করে শেষ হয়ে গেল বইটা। এই অঞ্চলের রাজনীতি যখন ধীরে ধীরে নানা কুশীলবের অংশগ্রহণে জটিল হয়ে উঠছে, পশ্চিম পাকিস্তানি আর তার ধামাধরা স্বার্থান্বেষী বাঙ্গালিরা যখন সদ্য স্বাধীন দেশে ইংরেজ আমলের ঔপনিবেশিক পন্থা টিকিয়ে রেখে নতুন ভাবে শোষণের জাল বিস্তার করছে, গোপালগঞ্জের কিশোর শেখ মুজিব যখন একটু একটু করে গোটা বাংলাদেশের শেখ মুজিব হয়ে উঠছেন ঠিক তখনই শেষ হয়ে গেল বইটা।

বইটির রচনাকাল ১৯৬৭ সাল হলেও এই বইয়ে মূলত উঠে আসার সুযোগ পেয়েছে লেখকের রাজনৈতিক জীবনের শৈশব থেকে রাজনৈতিক যৌবনের শুরুর দিককার অংশ। পাকিস্তানের আন্দোলনের সময়কার রাজনীতি সচেতন এক কিশোর মুজিব থেকে ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের কড়চা পর্যন্ত মূলত এই বইয়ের কলেবর। বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবনের খুব সামান্য অংশের সাথেই, আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে একেবারে শুরু দিকের অংশের সাথেই কেবল পরিচিত করায় এই বইটি। এখানে গোপালগঞ্জের ডানপিটে সাহসী সমাজ সচেতন কিশোর শেখ মুজিবের পরিণত বলিষ্ঠ নেতা হয়ে ওঠার কিছুটা আভাস পাই। কিন্তু সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার গল্পের প্রায় কিছুই আমরা পাই না। কিন্তু এই হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটার সাথে, তাঁর রাজনৈতিক দর্শন আর উপলব্ধির সাথে, তাঁর চেতনা আর স্বপ্নের সাথে, তাঁর বোধ আর বোধের বিবর্তনরেখার সাথে পরিচিত হয়ে উঠি। কোনো রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট বা বিশাল প্রভাবশালি ধনাঢ্য কোনো পরিবারে জন্ম নেন নি তিনি। গ্রামের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত গৃহস্থ পরিবারে জন্ম নেয়া একজন কীভাবে হয়ে উঠলেন বাংলার মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতীক? যেসব নেতাদের কাছে রাজনীতির পাঠ নিয়ে কিশোর মুজিব উঠে এসেছেন ধীরে ধীরে, মঞ্চের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে কীভাবে তিনি তাঁদের ছাপিয়ে আরও অনেক উপরে উঠে গেলেন? কীভাবে হয়ে উঠলেন নেতাদের নেতা? সাম্প্রদায়িকতাকে উপজীব্য করে শুরু হয়েছিল যে আন্দোলন, সেই পাকিস্তান আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে যাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা তিনি কীভাবে আর কেন হয়ে উঠলেন অসাম্প্রদায়িক বাংলার গণমানুষের নেতা?

শেখ মুজিব রাজনীতি করেছেন মূলত মানুষের জন্য, আর কিছু না বোঝা গেলেও এইটুকু অন্তত বুঝতে পারা যায় এই তিনশ পৃষ্ঠার এই ছোট্ট বই থেকে। আর এই জন্যই তাঁর কোনো পিছুটান ছিল না, স্বার্থের জন্য আপোষের মনোভাব ছিল না, পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার দায় ছিল না। যা করেছেন নিজে বিশ্বাস করে করেছেন। এজন্যে বারবার তিনি উল্লেখ করেছেন তিনি গোপন রাজনীতি বা পালিয়ে থেকে বিবৃতি দেয়ার রাজনীতি পছন্দ করতেন না। বারবার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি শোষক শ্রেণির দ্বারা। পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু সেই আন্দোলনের ফসল পাকিস্তানে একেবারে শুরু থেকেই তিনি জেলের ভেতর কাটিয়েছেন অধিকাংশ সময়। ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে জন্য সংগ্রাম করেছিলেন তা তিনি পাননি, বরং সাদা চামড়ার বদলে কালো চামড়ার শোষণ পেয়েছে জনগণ। দেখলেন, শাসকের নাম বদলেছে রঙ বদলেছে, কিন্তু চরিত্র বদলায় নি। যাদের সাথে নিয়ে পাকিস্তান আন্দোলন করেছেন, তাদের অনেকের বিপক্ষেই তাই তাঁর আর তাঁর সমমনাদের নতুন সংগ্রাম শুরু হলো।

দুইশ বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন এই অঞ্চলের মুসলমান আর হিন্দুর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরাজমান যে অসন্তোষ তা কেবল বৃদ্ধিই করেছিল। তার চূড়ান্ত রূপ পায় সম্ভবত যখন ধর্মের নামে দেশভাগের আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়ল ভারতের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। এই অঞ্চলের মুসলমানদের জন্য উন্নতির আর কোনো বিকল্প পথ খোলা ছিল কিনা, সেই বিতর্ককে এই লেখায় সাবধানে পাশ কাটিয়েই বলা যায়, কোনো সাম্প্রদায়িক আন্দোলন সাধারণত কোনো ভালো ফলাফল বয়ে আনে না। দেশভাগ আর তার আগে পরের সময়ের কথা বার বার উঠে এসেছে। উঠে এসেছে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার কথা, কখনও ঢাকায়, কখনও কোলকাতায়, কখনও এপারে, কখনও ওপারে। কখনও রাজনৈতিক নেতারা হিন্দু-মুসলিম অসন্তোষ উস্কে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টিতে সহায়তা করেছেন, নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে। এখনকার মতোই ইমাম, হুজুর আর পীরসাহেবেরা অংশ নিয়েছেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অনুঘটক হিসেবে। জনগণকে ধর্মের নামে আলাদা করতে চেয়েছেন বারবার, সাম্প্রদায়িক নেতা আর অনেক ধর্মগুরু। এইসব ঘটনাই সম্ভবত ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান আন্দোলনের একজন নিবেদিত কর্মী শেখ মুজিবকে বুঝতে শিখিয়েছে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ না গড়তে পারলে আসলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।

পাকিস্তান আমল থেকেই শুরু হয় যে কোনো ইস্যুতে ভারত আর ইসলাম ধ্বংসের জুজু দেখানো শুরু হয়। অবাক হয়ে লক্ষ্য করি সেই রাজনীতি করে যাচ্ছে এখনও সেই পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ভূত। ২১ শে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে গুলি চালানোর পরে সরকার থেকে বলা হয়, ‌‌"হিন্দু ছাত্ররা কলকাতা থেকে এসে পায়জামা পরে আন্দোলন করেছে।" ধীরে ধীরে তিনি উপলব্ধি করেছেন পাকিস্তান আসলে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। দুঃখ করেই তিনি লিখেছেন, ‌‌"দুঃখের বিষয়, পাকিস্তান আন্দোলনের যারা বিরোধিতা করেছিল, এখন পাকিস্তানকে ইসলামিক রাষ্ট্র করার ধুয়া তুলে রাজনীতিকে তারাই বিষাক্ত করে তুলেছে। মুসলিল লীগ নেতারাও কোনো রকম অর্থনৈতিক ও সমাজনৈতিক প্রোগ্রাম না দিয়ে একসঙ্গে যে স্লোগান নিয়ে ব্যস্ত রইল, তা হল 'ইসলাম'।" অবাক লাগে, ধর্ম বেঁচে যারা মূলত জীবন ধারণ করে, তাদের চারিত্রিক গুণাবলি এত বছর পরেও খুব একটা বদলায় নি। যুক্তফ্রন্টের আর মুসলিম লীগের নির্বাচনের সময় মুজিবের সাথে জনপ্রিয়তায় টেক্কা দিতে না পেরে ঠিক এখনকার মতোই ধর্মের ট্রাম্পকার্ড খেলার চেষ্টা করে মুসলিম লীগ। লেখকের ভাষায়, ‌‌"... মুসলিম লীগ যখন দেখতে পেলেন তাদের অবস্থা ভালো না, তখন এক দাবার ঘুঁটি চাললেন। অনেক ব��় বড় আলেম, পীর ও মাওলানা সাহেবদের হাজির করলেন। ... ... এক ধর্মসভা ডেকে ফতোয়া দিলেন আমার বিরুদ্ধে যে, 'আমাকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে ���া, ধর্ম শেষ হয়ে যাবে'। সাথে শর্ষিনার পীর সাহেব, বরগুনার পির সাহেব ... ... সবাই আমার বিরুদ্ধে নেমে পড়লেন এবং যত রকম ফতোয়া দেওয়া যায় তাহা দিতে কৃপণতা করলেন না।" কিন্তু বাংলার মানুষের জন্য রাজনীতি করতে করতে তিনি ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন বাঙালিকে এইভাবে ধোকা দেওয়া যাবে না।

আমি বইটি থেকে মূলত সেই সময়ের শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শন বুঝতে চেষ্টা করেছি। পাতার পর পাতা থিসিস লিখে আর গবেষণা করে মাঠের রাজনীতিতে যারা কিছুই করতে পারেন নি তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন নি তিনি। তিনি কাজ করতে করতে শিখেছেন, ভুল হলে স্বীকার করেছেন, সংশোধনের চেষ্টা করছেন। বলেছেন এভাবে, ‌‌"আমার যদি কোনো ভুল হয় বা অন্যায় করে ফেলি, তা স্বীকার করতে আমার কোনোদিন কষ্ট হয় নাই। ভুল হলে সংশোধন করে নেব, ভুল তো মানুষেরই হয়ে থাকে। ... ... আমি অনেকের মধ্যে দেখেছি, কোনো কাজ করতে গেলে শুধু চিন্তাই করে। চিন্তা করতে করতে সময় পার হয়ে যায়, কাজ আর হয়ে ওঠে না। ... ... আমি চিন্তা ভাবনা করে যে কাজটা করব ঠিক করি, তা করেই ফেলি। যদি ভুল হয় সংশোধন করে নেই। কারণ যারা কাজ করে তাদেরই ভুল হতে পারে, যারা কাজ করে না তাদের ভুলও হয় না।"

আন্দোলন আর সংগ্রামের ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে সেই সময়কার গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব নেতার সাথে বিভিন্ন ���াঁর মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সেইসব নেতাদের কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। বইয়ে ঘুরে ফিরে এসেছে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা, যাঁর হাত ধরে তিনি রাজনীতি শিখেছেন। লেখক একেবারে শুরুর দিকেই বলছেন, ‌‌"ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হল। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম। কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।" বার বার বিভিন্ন জায়গায় তিনি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন, তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। কিন্ত অবাক লাগে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একেবারে শুরুর দিকে যখন শেখ মুজিব একাবেরাই বিশিষ্ট কেউ হয়ে ওঠেন নি, তখনও তাঁর নিজের মত আর বিশ্বাসের প্রতি ছিল ভয়ঙ্কর আত্মবিশ্বাস। এক সভার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলছেন, ‌‌"তিনি আনোয়ার সাহেবকে একটা পদ দিতে বললেন। আমি বললাম কখনোই হতে পারে না। সে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোটারি করেছে, ভালো কর্মীদের জায়গা দেয় না। কোনো হিসাব নিকাশ কোনোদিনও দাখিল করে না। শহীদ সাহেব আমাকে বললের Who are you? You are nobody. আমি বললাম, If I am nobody, then why you have invited me? You have no right to insult me. I will prove that, I am somebody. Thank you, sir. I will never come to you again." অবাক হয়ে ভাবতে হয়, কতটুকু আত্মবিশ্বাস থাকলে একটা ছোট্ট মহকুমার সামান্য একজন কিশোর রাজনীতিবিদ সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতার সামনে এভাবে নিজের মতামত দিতে পারে!

পশ্চিম পাকিস্তানি তথা অবাঙ্গালি নেতাদের মধ্যে একমাত্র জিন্নাহর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ছিল বলে মনে হয়েছে। বাকি অধিকাংশ অবাঙ্গালি নেতা মূলত স্বার্থান্বেষী আর ক্ষমতালিপ্সু মনোভাবই ফুটে উঠেছে লেখার বিভিন্ন অংশে। ধীরে ধীরে সম্ভবত তিনি এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের ধামাধরা, মূলত ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেন, তাঁরাই রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। বিশেষ করে চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময় নেজামে ইসলামের নেতাদের ক্ষমতালিপ্সু আদর্শহীন মনোভাব তাঁকে পীড়িত করে। কিন্তু এইসব শিক্ষাই তাকে ধীরে ধীরে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির গুরুত্ব আরও ভালোভাবে উপলব্দি করতে উদ্বুদ্ধ করে। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তিনি মূল্যায়ন করছেন এভাবে, ‌‌"এই নির্বাচনে একটা জিনিস লক্ষ্য করা গেছে যে, জনগণকে ‘ইসলাম ও মুসলমানের নামে’ স্লোগান দিয়ে ধোঁকা দেওয়া যায় না। ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমানরা তাঁদের ধর্মকে ভালোবাসে; কিন্তু ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়ে কার্যসিদ্ধি করতে তারা দিবে না এ ধারণা অনেকেরই হয়েছিল।"

সেই সময়ের আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাওলানা ভাসানী, যাঁকে বইয়ে বিভিন্ন জায়গায় লেখক মূলত মাওলানা সাহেব হিসেবে সম্মোধন করেছেন, তাঁর প্রতি বিভিন্ন জায়গায় ভরসা আর শ্রদ্ধার প্রকাশ থাকলেও তাঁর কিছু কর্মকাণ্ডে লেখকের বিরক্তিও চাপা থাকেনি। ব্যক্তিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় আর তাঁর নিকটবর্তী সময়কাল ছাড়া মাওলানা ভাসানীর ব্যাপারে খুব বেশি জানাশোনা আমার নেই। কিন্ত মুক্তিযুদ্ধের সময় আর তার নিকট অতীতে, গুরুত্বপূর্ণ সময় আর সিদ্ধান্তের সময় উধাও হয়ে যাওয়ার বা দায়িত্ব না নেয়ার কথা পড়েছি। মাওলানা ভাসানীর এই রকম কিছু কর্মকাণ্ডে নিজের বিরক্তি বেশ ভালোভাবেই প্রকাশ করেছেন,‌‌"মাওলানা ভাসানীর এই দরকারের সময় আত্মগোপনের মনোভাব কোনোদিন পরিবর্তন হয় নাই। ভবিষ্যত অনেক ঘটনায় তার প্রমাণ হয়েছে।" এখানেই সম্ভবত পার্থক্য গড়ে উঠেছে। একজন যিনি গণমানুষের নেতা হয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দায়িত্বকে পাশ কাটিয়ে গেছেন, রাজনৈতিক কেবলা বা অন্য কোনো কারণে নিজ���র হাতে দায়িত্বের কালিমা লাগাতে চান নি, আর অন্যজন সামান্য এক মহকুমার সচেতন কিশোর রাজনীতিবিদ থেকে হাতে কলমে কাজ করে, ভুল করতে করতে হয়ে উঠেছেন গণমানুষের নেতা, বাঙ্গালির আশা আকাঙ্খার প্রতীক।

মূলত সাম্যে বিশ্বাস বিশ্বাস করতেন তিনি, বিশ্বাস করতেন গণমানুষের অধিকারে। সরাসরি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি তিনি করেন নি। বিভিন্ন সময় তাঁর লেখায় মনে হয়েছে তিনি অতি বিপ্লবীদের পছন্দ করতেন না তিনি। কারণ এই অঞ্চলের অতি বিপ্লবীদের অনেকেই ছিল মূলত খাতা কলমের রাজনীতিবিদ আর জনবিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে তিনি চেয়েছেন জণগণকে নিয়ে প্রকাশ্য নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করতে। নিজে সরাসরি সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন না করলেও তিনি মূলত সমাজতন্ত্রের মূলনীতি অর্থাৎ সাম্যে বিশ্বাস করতেন। প্রায় একই সময় স্বাধীন হওয়া কম্যুনিস্ট নতুন চীন সফরে গিয়ে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন আর উপলব্ধি করেছেন নেতাদের স্বার্থান্বেষী কার্যকলাপে কীভাবে জণগনের স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটছে। চীন সফরের কথা লিখতে গিয়ে সমাজতন্ত্রের প্রতি তার মনোভাব ব্যক্ত করতে গিয়ে বলছেন, ‌‌"আমি নিজে কম্যুনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। এঁকে আমি শোষণের যন্ত্র হিসাবে মনে করি। এই পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে ততদিন দুনিয়ায় মানুষের উপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারে না।" আরও বলছেন এভাবে, ‌‌"আওয়ামী লীগ ও তার কর্মীরা যে কোনো ধরণের সাম্প্রদায়িকতাকে ঘৃণা করে। আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক নেতা ও কর্মী আছে যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে; এবং তারা জানে সমাজতন্ত্রের পথই একমাত্র জনগণের মুক্তির পথ। ধনতন্ত্রবাদের মাধ্যমে জনগণকে শোষণ করা চলে। যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা কোনোদিন সাম্প্রদায়িকিতায় বিশ্বাস করতে পারে না। তাদের কাছে মুসলমান, হিন্দু, বাঙালি, অবাঙালি সকলেই সমান।" সমাজতন্ত্রের প্রতি এই দূর্বলতাই হয়ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে দেশে তাঁকে বাকশাল গঠন করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

‌‌"মানুষেরে ধোঁকা আমি দিতে পারব না"- চোখের পানিতে এই প্রতিজ্ঞা যিনি করেছিলেন, বাংলার মানুষের জন্য যিনি জেল খানায় পার করেছেন অর্ধেক সময়, বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গোপালগঞ্জের কিশোর শেখ মুজিব যখন ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠছেন, ঠিক তখনই সমাপ্ত হল তাঁর - অসমাপ্ত আত্মজীবনী। আর তাঁর আত্মজীবনীর মতো জীবনটাকেও অসমাপ্ত করে দিল এই বাংলারই কিছু মানুষ।

[লেখাটি সচলায়তনে প্রকাশিত]
Profile Image for Naziur Rahman.
Author 1 book67 followers
August 13, 2013
(পুরো লেখাটাতে আমি একবারও জাতির জনক বা বঙ্গবন্ধু সম্ভাষণ ব্যবহার না করার চেষ্টা করব.. কারন পুরো লেখাটাতেই আমি তাকে শুধুমাত্র এ বইয়ের লেখক হিসেবেই দেখতে চাই)

এ বইটা মুলত ১৯৩৮/৩৯ -১৯৫৫ পর্যন্ত সময়কালের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে লেখা। এছাড়া শুরুতে লেখকের গ্রামের বাড়ি, জন্মবৃত্তান্ত, বংশ, ও তরুন কালের কিছু ঘটনা পাঠকের সুবিধার্থে লেখক দিয়েছেন। বইটা ঠিক ডায়েরী না। ১৯৬৭ সালে কারাগারে থাকাকালীন তিনি এই বই লেখা শুরু করেন। তাই এটিকে লেখকের প্রত্যক্ষ স্মৃতিচারনমূলক আত্মজীবনীই বলা যায়। বইটি শ্রুতি লিখন বা অনুলিখনের মাধ্যমে অন্য কারো হাতে লিপিবদ্ধ নয় বরং লেখক নিজেই জেলখানায় বসে নিজের স্মৃতি থেকে বইটি রচনা করেন। তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা শুধুমাত্র প্রকাশের আগে কিছু ভাষাগত সম্পাদনা করেন। এছাড়া তথ্যগত কোন সম্পাদনা করা হয়নি বলেই উল্লেখিত রয়েছে।

১৯৩৮/৩৯-১৯৫৫ এর সময়কার রাজনীতি সম্পর্কে আমি খুব বেশি কিছু জানিনে বলে বইটির রিভিউ করতে গিয়ে আমি ঐ সময়কার সরাসরি মাঠ পর্যায়ের রাজনীতির অংশটুকু নিয়ে খুব বেশি কিছু লিখব না। এরচে বরং লেখকের রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা, দেশভাবনা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে লেখকের চিন্তাভাবনা মতামত ও ছোটখাট কিছু বিতর্ক নিয়ে লেখার চেষ্টা করব। যেহেতু বইয়ের প্রধানতম অংশটুকুই আমি অনেক খানি উহ্য রাখার চেষ্টা করব বলতেসি (যেটা প্রায় অসম্ভব!) তাই এই লেখাটাকে সরাসরি রিভিউ হিসাবে না দেখাই ভালো। তারচে বরং এটাকে আমরা পাঠকের নিজস্ব চিন্তা ভাবনা হিসাবেই দেখি!

আর লেখার ক্ষেত্রে আমি টানা এক প্যরাগ্রাফে বা গদ্য আকারে লিখে যাওয়ার চেয়ে পয়েন্ট আকারে লিখে যাওয়াটাকে প্রাধান্য দিব। কারন গদ্য আকারে লিখতে গেলে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা আবশ্যক। সে তুলনায় পয়েন্ট আকারে লিখলে আমি যেকোন পয়েন্টেই বইয়ের যেকোন বিষয় তুলে আনতে পারব। তাই সেক্ষেত্রে আরেকটা গুরুত্বপুর্ন কথা বলে দিতে চাই যে, পয়েন্ট গুলাকে আলাদা গুরুত্ব দেবার দরকার নেই। শুধু মাত্র চিহ্নিত করার জন্যই সংখ্যা গুলো ব্যবহার করব। সংখ্যা গুলোর আলাদা কোন গুরুত্ব থাকবে না।

যাহোক! এবার শুরু করি!

১- প্রথমেই বইটার লেখনি নিয়ে কিছু বলা যাক। খুব জটিল কিছু সময়ের রাজনৈতিক পরিক্রমা আর রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে এক নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিবিদের লেখা এই বই। কিন্তু মজার ব্যপার হচ্ছে পুরো বইটা অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় লেখা। কোন ভারী ভারী কথাবার্তা বা উপদেশমূলক বাণী দেয়ার চেষ্টা করেন নাই। অত্যন্ত সহজ ভাষায়, বলা যায় একরকম নির্লিপ্ত আবেগ বর্জিত ভাষায় পুরো ঘটনা প্রবাহ লিখে গেছেন। কিছু জায়গায় ঘটনার প্রয়োজনে কিছু আবেগতাড়িত কথাবার্তা এসেছে। কিন্তু সেটার পরিমান খুব বেশি নয়। আর ভাষা অত্যন্ত সাবলীল, পড়তে কোন অসুবিধা হয় না, বিরক্তও লাগে না।

২- এবার লেখকের বংশ পরিচয় নিয়ে কিছু কথাবার্তা বলা যাক। কোথায় কবে কিভাবে জন্ম সেসব বিস্তারিত ব্যপারে না যাই। যে কথা বলতে চাই সেটা হচ্ছে এ বই পড়ার আগ পর্যন্ত আমার একটা ভ্রান্ত ধারনা ছিল। সেটা বেশ অনেকদিন আগে কোথায় যেন একটা লেখা পড়ে হয়েছিল। ধারনাটা হলো এই যে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার বংশগত ভাবে পাঠান ছিল। তার পূর্বপুরুষগণ এ দেশের অধিবাসী ছিলেন না বরং দেশবিভাগের পর তারা পুর্ববাংলায় এসে থাকতে শুরু করেন, এবং এটা নাকি দেশ বিভাগের একটা প্লাস পয়েন্ট (এই অদ্ভুত কথাটা ঠিক কোথায় পড়সিলাম মনে পড়তেসে না!! :/ )! কিন্তু এ বই পড়ার পর জানতে পারলাম এই যে লেখকের বংশের গোড়াপত্তনকারী শেখ বোরহানউদ্দিন কবে থেকে পুর্ববাংলায় লেখকের জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় এসে বসবাস করতে থাকেন তার কোন আদি ইতিহাস পাওয়া যায় না… যে টুকু স্মৃতি অবশিষ্ট ছিল তা হচ্ছে প্রায় দুইশত বছরের (লেখকের লেখনির সময় থেকে) পুরাতন কিছু দালান। অর্থাৎ ইংরেজ আমলেরও বহু পূর্ব থেকেই তার বংশের বাংলায় বসবাস এবং এর সাথে দেশ বিভাগের কোন সম্পর্ক নাই!

৩- এই বইয়ে সবচেয়ে বেশি বার যার কথা এসেছে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। প্রায় পুরো বইয়েই লেখক তাকে শহীদ সাহেব বলে সম্বোধন করে গেছেন। সোহরাওয়ার্দী ছিলেন একাধারে লেখকের রাজনীতিতে আসার প্রেরণা, রাজনৈতিক পরামর্শদাতা এবং পরম শ্রদ্ধার পাত্র। এ বই পড়ার আগে আমার সোহরাওয়ার্দীকে নিয়েও বেশ ভ্রান্ত ধারনা ছিল যে তিনি পাকিস্তানপন্থী রাজনীতিবিদ ছিলেন, সাধারন মানুষের সাথে তার দূরত্ব ছিল, তিনি চান নাই যে পাকিস্তান ভাঙুক এবং তিনি ছিলেন একজন বিতর্কিত রাজনীতিবিদ। এ বই পড়ে সোহরাওয়ার্দী সম্পর্কে বেশ অনেকখানি ধারনা পাওয়া যায়। এবং সেটা পজেটিভ ধারনাই। তবে লেখক যেহেতু রাজনৈতিক ভাবে সোহরাওয়ার্দীর দ্বারা অনুপ্রাণীত, তাই লেখায় ঋণাত্নক কথা বার্তা আসবেনা সেটাই স্বাভাবিক। আর যেহেতু শুধুমাত্র ১৯৫৫ পর্যন্তই এই বইয়ের ব্যপ্তিকাল তাই পরের ঘটনা প্রবাহ এবং তাতে সোহরাওয়ার্দীর ভূমিকাও আর জানা যায় না। শুধু উনাকে নিয়ে লিখেই এ বইয়ের রিভিউ শেষ করে দেয়া যায়! তাই উনাকে নিয়ে বেশি দূর লিখব না……

৪- লেখকের রাজনৈতিক জীবনের শুরু মোটামুটি ১৯৩৮ সালের দিকে (১৮ বছর বয়স) যখন সোহরাওয়ার্দী তাদের স্কুল পরিদর্শনে আসেন তখন থেকে। তবে সরাসরি তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ১৯৪১ সালে তার মেট্রিক পরীক্ষার পর থেকে। ৪৩ এর দূর্ভিক্ষের সময় লেখক পুরোপুরি মাঠ পর্যায়ের কর্মী হিসাবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। রাজনীতি করতে গিয়ে পরিবার থেকে কখনোই বাধাপ্রাপ্ত হন নাই। বরং তার বাবা তাকে সবসময় উৎসাহ যোগাতেন এবং স্ত্রীর কাছ থেকেও কখনো পিছুটান পেতে হয় নি। তার বাবা তাকে বলেছিলেন,

“বাবা রাজনীতি কর আপত্তি করব না, পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করছ এ তো সুখের কথা, তবে লেখাপড়া করতে ভুলিও না। লেখাপড়া না শিখলে মানুষ হতে পারবে না। আর একটা কথা মনে রেখ,’ sincerity of purpose and honesty of purpose’থাকলে জীবনে পরাজিত হবানা।”

৫- এরপর বলতে হয় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের কথা। পুরো বইয়ে লেখক তাকে হক সাহেব বলে সম্বোধন করে গেছেন। আরো অনেকবার ফজলুল হকের কথা এ লেখায় আসবে। তবে তৎকালীন সময়ে শেরে বাংলার জনপ্রিয়তা কিরুপ ছিল সেটা বোঝাতে একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয়।

একদিনের কথা মনে আচ্ছে, আব্বা ও আমি রাত দুইটা পর্যন্ত রাজনীতির আলোচনা করি। আব্বা আমার আলোচনা শুনে খুশি হলেন। শুধু বললেন, শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক সাহেবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণ না করতে। একদিন আমার মা-ও আমাকে বলেছিলেন,”বাবা যাহাই কর, হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছুই বলিও না।” শেরে বাংলা মিছি মিছিই ‘শেরে বাংলা’ হন নাই। বাংলার মাটিও তাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। যখনই হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেছি, তখনই বাধা পেয়েছি। একদিন আমার মনে আছে একটা সভা করছিলাম আমার নিজের ইউনিয়নে, হক সাহেব কেন লীগ ত্যাগ করলেন, কেন পাকিস্তান চাননা এখন? কেন তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সাথে মিলে মন্ত্রীসভা গঠন করেছেন? এই সমস্ত আলোচনা করছিলাম, হঠাৎ একজন বৃদ্ধ লোক যিনি আমার দাদার খুব ভক্ত, আমাদের বাড়িতে সকল সময়েই আসতেন, আমাদের বংশের সকলকে খুব শ্রদ্ধা করতেন- দাঁড়িয়ে বললেন,”যাহা কিছু বলার বলেন, হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছুই বলবেন না। তিনি যদি পাকিস্তান না চান, আমরাও চাই না। জিন্নাহ কে? তার নামও তো শুনি নাই। আমাদের গরিবের বন্ধু হক সাহেব।” এ কথার পর আমি অন্যভাবে বক্তৃতা দিতে শুরু করলাম। সোজাসুজিভাবে আর হক সাহেবকে দোষ দিতে চেষ্টা করলাম না। কেন পাকিস্তান আমাদের প্রতিষ্ঠা করতেই হবে তাই বুঝালাম। শুধু এইটুকু না, যখনই হক সাহেবের বিরুদ্ধে কালো পতাকা দেখাতে গিয়েছি, তখনই জনসাধারণ আমাদের মারপিট করেছে। অনেক সময় ছাত্রদের নিয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি, মার খেয়ে।

এ ছিল পুর্ব বাংলায় এ.কে. ফজলুল হকের জনপ্রিয়তা।

৬- এ ফাঁকে আরেকটা কথা বলে নেই। লেখক পুরো বইত��ই এরকম অমায়িক আচরণ বজায় রেখেছেন। তার সাথে অনেক সময়ই অনেকের মতের মিল হয় নাই, অনেকের সাথেই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কিন্তু কারো নামেই তিনি পুরো বইয়ে বাজে কথা বলেননি। কোন নেগেটিভ কথা বলতে হলেও আগে যথাযোগ্য শ্রদ্ধা আর সম্মান দেখিয়ে যথেষ্ট পরিমান ব্যখ্যা করে তবেই বলেছেন। যেমন উপরের পয়েন্টের কাহিনীটুকু লেখকের না দিলেও চলত! পাবলিকের কাছে দাবড়ানি দৌড়ানি খাইসেন সে কথা এভাবে না বললেও কোন ক্ষতি ছিল না। কিন্তু তিনি হক সাহেবের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধার যায়গাটুকু বোঝানোর জন্যই এই কাহিনীটুকু লিখে দিয়েছেন।

৭- একটা মজার ব্যপার এই যে পাকিস্তান আন্দোলনের সাথে লেখক ওতপ্রত ভাবে জড়িত ছিলেন, পাকিস্তান গড়ার লক্ষ্য নিয়েই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু কিন্তু পুরা বইয়ের কোথাও পাকিস্তানের জনক, পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সম্পর্কে কোন কথা নাই! অল্প যা-ও কিছু আছে তা-ও সরাসরি লেখকের কথা না এবং পজেটিভ কিছু না। যেমন শেরে বাংলা মুসলিম লীগ ছেড়ে দেয়ার পর মুজিব নিজে একবার উনার কাছে গিয়েছিলেন উনাকে মুসলিম লীগে ফেরত আসার জন্য। তখন শেরে বাংলা মুজিব সহ আরো যে কয়জন সাথে গিয়েছিল তাদের নিয়ে খেতে বসে বলেন,” আমি কি লীগ ত্যাগ করেছি? না, আমাকে বের করে দেয়া হয়েছে? জিন্নাহ সাহেব আমাকে ও আমার জনপ্রিয়তাকে সহ্য করতে পারেন না। আমি বাঙালি মুসলমানদের জন্য যা করেছি জিন্নাহ সাহেব সারা জীবনে তা করতে পারবেন না। বাঙালিদের স্থান কোথাও নাই, আমাকে বাদ দিয়ে নাজিমুদ্দীনকে নেতা করার ষড়যন্ত্র।” কথায় কথায় তিনি আরো বলেন,”১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব কে করেছিল, আমিই তো করেছিলাম! জিন্নাহকে চিনত কে?” এতে বোঝা যায় যে জনসাধারনের সাথে জিন্নাহের তেমন কোন সংযোগ ছিল না। এমনকি মুজিব নিজেও পাকিস্তান দাবীর প্রেক্ষিতে সোহরাওয়ার্দীকে নেতা মেনেই আন্দোলন করে গেছেন, জিন্নাহকে নিয়ে তার মাথাব্যথা ছিল বলে পুরো বইয়ে একবারও মনে হয় নাই!

৮- সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে লেখকের আরেকটা ভালো উক্তি তুলে দেই…

শহীদ সাহেব ছিলেন উদার, নীচতা ছিলনা, দল মত দেখতেন না, কোটারি করতে জানতেন না, গ্রুপ করারও চেষ্টা করতেন না। উপযুক্ত হলেই তাকে পছন্দ করতেন এবং বিশ্বাস করতেন। কারণ, তার আত্মবিশ্বাস ছিল অসীম। তার সাধুতা,নীতি, কর্মশক্তি ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে চাইতেন। এ জন্য তাকে বারবার অপমানিত ও পরাজয়বরণ করতে হয়েছে। উদারতা দরকার, কিন্তু নীচ অন্তঃকরণের ব্যক্তিদের সাথে উদারতা দেখালে ভবিষ্যতে ভালর থেকে মন্দই বেশি হয়, দেশের ও জনগণের ক্ষতি হয়।

৯- বাঙালির স্বভাব নিয়ে লেখকের একখানা কড়া উক্তি শেয়ার না করে পারছি না…

আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল ‘আমরা মুসলমান, আরেকটা হল, আমরা বাঙালি।’ পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে। বোধহয় দুনিয়ার কোন ভাষায়ই এই কথাটা পাওয়া যাবে না,’পরশ্রীকাতরতা’। পরের শ্রী দেখে যে কাতর হয় তাকে ‘পরশ্রীকাতর’ বলে। ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই, ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও জীবনভর অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি। এমন উর্বর জমি দুনিয়ার খুব অল্প দেশেই আছে। তবুও এরা গরিব। কারণ যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজকে এরা চেনে না, আর যতদিন চিনবে না এবং বুঝবে না ততদিন এদের মুক্তি আসবে না অনেক সময় দেখা গেছে,একজন অশিক্ষিত লোক লম্বা কাপড়,সুন্দর চেহারা, ভাল দাড়ি, সামান্য আরবি ফার্সি বলতে পারে, বাংলাদেশে এসে পীর হয়ে গেছে। বাঙালি হাজার হাজার টাকা তাকে দিয়েছে একটু দোয়া পাওয়ার লোভে। ভাল করে খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এ লোকটা কলকাতার কোন ফলের দোকানের কর্মচারী অথবা ডাকাতি বা খুনের মামলার আসামী। অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙালির দুঃখের আর একটা কারন।

১০- লেখক খুব সুন্দর করে তার ভ্রমন কাহিনী লিখে গেছেন। পুরো বইয়ে তিন চারবার তার বিভিন্ন স্থানে ভ্রমনের বিবরন এসেছে। উনি খুব গুছিয়ে বেশ কিছু খুটিনাটি ���হ ভ্রমন কাহিনী গুলো লিখেছেন। এক দুটোর কথা পরের দিকে বলা যেতে পারে…

১১- ভাষা আন্দোলনের সময়ে প্রবেশ করছি আমরা। সরাসরি লেখকের লেখনি থেকে তুলে দেই,

বাংলা পাকিস্তানের শতকরা ছাপ্পান্ন ভাগ লোকের মাতৃভাষা। তাই বাংলাই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। তবুও আমরা বাংলা ও উর্দু দুইটা রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করেছিলাম। পাঞ্জাবের লোকেরা পাঞ্জাবি ভাষা বলে, সিন্ধুর লোকেরা সিন্ধি ভাষায় কথা বলে, সীমান্ত প্রদেশের লোকেরা পশতু ভাষায় কথা বলে, বেলুচরা বেলুচি ভাষায় কথা বলে। উর্দু পাকিস্তানের কোন প্রদেশের ভাষা নয়, তবুও যদি পশ্চিম পাকিস্তানের ভায়েরা উর্দু ভাষার জন্য দাবি করে, আমরা আপত্তি করব কেন? যারা উর্দু ভাষা সমর্থন করে তাদের একমাত্র যুক্তি হল উর্দু ‘ইসলামিক ভাষা’। উর্দু কি করে যে ইসলামিক ভাষা হল আমরা বুঝতে পারলাম না।
দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে। আরব দেশের লোকেরা আরবি বলে। পারস্যের লোকেরা ফার্সি বলে, তুরষ্কের লোকেরা তুর্কি ভাষা বলে, ইন্দোনেশিয়ার লোকেরা ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় কথা বলে, মালয়শিয়ার লোকেরা মালয় ভাষায় কথা বলে, চীনের মুসলমানরা চীনা ভাষায় কথা বলে। এ সম্বন্ধে অনেক যুক্তিপুর্ণ কথা বলা চলে। শুধু পূর্ব পাকিস্তানের ধর্মভীরু মুসলমানদের ইসলামের কথা বলে ধোঁকা দেওয়া যাবে ভেবেছিল, কিন্তু পারে নাই।

১২- এই ঘটনা প্রবাহে এবার দৃশ্যপটে মাওলানা ভাসানীর আগমন। সম্ভবত ১৯৪৮ এ মাওলানা ভাসানী আসাম ছেড়ে বাংলায় চলে আসেন (বইয়ে কোন নির্দিস্ট সময় বলা নেই)।

১৩- আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠাকালীন ঘটনা। ১৯৪৯ সালের সম্ভবত জুন-জুলাইয়ের দিকের ঘটনা। লেখক তখন জেলে। এর মধ্যেই মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ বেড়ে গেছে। নতুন বিরোধী রাজনৈতিক দল সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তখন ২৩ জুন ঢাকায় পুরানো লীগ কর্মী ও অন্য অনেক নেতা কর্মীদের সম্মেলন ডাকা হয়। শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, ভাসানী, আল্লামা মাওলানা রাগীব আহসান, এমএলএ দের ভিতর থেকে জনাব খয়রাত হোসেন, বেগম আনোয়ারা খাতুন, আলী আহমদ খান ও হাবিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে ধনু মিয়া এবং বিভিন্ন জেলার অনেক প্রবীণ নেতাও যোগ দিয়েছিলেন এ সম্মেলনে। তাদের সকলের সম্মতিক্রমে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয় যার নাম দেয়া হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। এই প্রতিষ্ঠার কাহিনী বলার আমার কোন দরকার নাই। তবে যে কথার অবতারনা করার জন্য এ পয়েন্ট সেটাতে আসি। জেলে বসে দল প্রতিষ্ঠার খবর পেয়ে লেখকের মানসিক প্রতিক্রিয়া ছিল এমন,

আমি মনে করেছিলাম, পাকিস্তান হয়ে গেছেসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নাই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে, যার একটা সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে। ভাবলাম, এখনো সময় আসে নাই, তাই বাইরে যারা আছেন তারা চিন্তা ভাবনা করেই করেছেন।

১৪- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আর খন্দকার মোশতাক আহমেদ এর কথা পুরো বইয়ে এসেছে আলাদা ভাবে একবার কি দুবার। যার অর্থ দাঁড়ায় এই বইয়ের সময়কাল পর্যন্ত (১৯৫৫) এই কজনের সাথে লেখকের সরাসরি সম্পর্ক ছিল না। উনারা লেখকের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হন আরো পরে। আমি পুরো বইয়ে আকুপাকু করে তাজউদ্দীনের নাম খুঁজে গেছি। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহে লেখকের সাথে তিনি ছিলেন না বলে বইয়েও তাঁর কথা খুব একটা আসেনি। পুরো বইয়ের মধ্যে শুধু এই ব্যপারটাই আমার জন্য খানিক হতাশাজনক ছিল!! তবে যে একটা ঘটনা এসেছে তা-ই অন্যদের তুলনায় আলাদা এবং স্পেশাল ছিল।

১৫- এইটুকু একটা বইয়ের প্রায় অর্ধেক অংশ লেখক জেলে পার করেছেন! এই বই লিখেছেনও জেলে বস���! পুরো বইয়ে কয়বার তার জেলে যাবার কথা আছে তা মনে রাখার দুঃসাহস করতে পারিনি! এই জেল জীবন ও রাজনৈতিক জীবনের কারনে পরিবারকে স��য় দিতে পেরেছেন খুব অল্পই। এ প্রেক্ষিতে একটা ঘটনা উল্লেখ না করলেই না। বইয়ের ব্যাক কভারে এ ঘটনাটা আলাদা ভাবে দেয়া আছে,

একদিন সকালে আমি ও রেণু (লেখকের স্ত্রী) বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু(হাসিনা) ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর আব্বা আব্বা বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। এক সময় কামাল হাচিনাকে বলছে,”হাচু আপা হাচু আপা তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।” আম�� আর রেণু দুজনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম,”আমি তো তোমারও আব্বা।” কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে যাই তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস।

১৬- লেখকের ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীনে শান্তি সম্মেলনে যোগদান এবং পুরো চীন ভ্রমন নিয়ে খুব সুন্দর ভ্রমন কাহিনী লেখক লিখে গেছেন। লিখতে গেলে পুরোটাই তুলে দিতে হয়… শুধু একটা ছোট ঘটনা তুলে দেই। ২রা অক্টোবর শান্তি সম্মেলনের দিনে। ৩৭৮জন সদস্য সাইত্রিশটা দেশ থেকে এসেছে। বিভিন্ন দেশের নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন। পূর্ব পাকিস্তান থেকে লেখক এবং আতাউর রহমান খান বক্তব্য দিলেন। লেখক বাংলায় বক্তৃতা করলেন। আতাউর রহমান খান সেটা ইংরেজি করে দিলেন। এ নিয়ে লেখক বলছেন,

… ইংরেজি থেকে চীনা,রুশ ও স্পেনিশ ভাষায় প্রতিনিধিরা শুনবেন। কেন বাংলায় বক্তৃতা করব না? ভারত থেকে মনোজ বসু বাংলায় বক্তৃতা করেছেন। পূর্ব বাংলার ছাত্ররা জীবন দিয়েছে মাতৃভাষার জন্য। বাংলা পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু লোকের ভাষা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে না জানে এমন শিক্ষিত লোক চীন কেন দুনিয়ায় অন্যান্য দেশেও আমি খুব কম দেখেছি। আমি ইংরেজিতে বক্তৃতা করতে পারি। তবু আমার মাতৃভাষায় বলা কর্তব্য। আমার বক্তৃতার পরে মনোজ বসু ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “ভাই মুজিব, আজ আমরা দুই দেশের লোক, কিন্তু আমাদের ভাষাকে ভাগ করতে কেউ পারে নাই। আর পারবেও না। তোমরা বাংলা ভাষাকে জাতীয় মর্যাদা দিতে যে ত্যাগ স্বীকার করেছ আমরা বাংলা ভাষাভাষী ভারতবর্ষের লোকেরাও তার জন্য গর্ব অনুভব করি।

এই সম্মেলনেই লেখকের সাথে দেখা হয় রুশ লেখক অ্যাসিমভের (যা মনে হল আইজাক অ্যাসিমভের কথাই লেখক বলসেন! ) আরো দেখা হয় তুরস্কের কবি নাজিম হিকমতের সাথে।

১৭- চীন আর চীন ভ্রমন নিয়ে লেখার শেষ পর্যায়ে লেখকের সমাজতন্ত্রের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে। লেখক বলেন,

আমি নিজে কমিউনিস্ট নই। তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। একে আমি শোষণের যন্ত্র হিসাবে মনে করি। এই পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে ততদিন দুনিয়ার মানুষের উপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারে না। পুঁজিপতিরা নিজেদের স্বার্থে বিশ্বযুদ্ধ লাগাতে বদ্ধ পরিকর। নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত জনগণের কর্তব্য বিশ্ব শান্তির জন্য সংঘবদ্ধভাবে চেষ্টা করা। যুগ যুগ ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে যারা আবদ্ধ ছিল , সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যাদের সর্বস্ব লুট করেছে- তাদের প্রয়োজন নিজের দেশকে গড়া ও জনগণের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক মুক্তির দিকে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। বিশ্বশান্তির জন্য জনমত সৃষ্টি করা তাই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

১৮- এরপরেই আসে ১৯৫৪ এর নির্বাচন ও যুক্তফ্রন্ট। ১৯৫৩তে এ কে ফজলুল হক সরাসরি আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। আওয়ামীলীগে থাকা এক পক্ষ তখন যুক্তফ্রন্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকল। ভাসানী স্পষ্ট ভাষায় ল��খক কে জানিয়ে দেন যে হক সাহেব সরাসরি আওয়ামীলীগে আসলে তবেই তাকে গ্রহন করা হবে, অন্য দল করলে তার সাথে যুক্তফ্রণ্ট করা চলবে না। এ ঘটনার পরবর্তী প্রবাহ বর্ননা করতে গিয়ে লেখক বেশ কয়েকবার ভাসানীর কিছু কাজের উপর বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। প্রথমে যুক্তফ্রন্টের তীব্র বিরোধিতা করলেও পরে ভাসানী সোহরাওয়ার্দী বা লেখকের মতামত না নিয়েই যুক্তফ্রন্ট করার জন্য ফজলুল হকের সাথে একমত হয়ে দস্তখত করে ফেলেন। এরপর কিছু অযাচিত অদ্ভুৎ ও পরগাছা ধরনের দলের উদ্ভব ঘটে… যারা বিভিন্ন ভাবে যুক্তফ্রন্টের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে।

১৯- সেই পাকিস্তান আমল থেকেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একই ধুয়া চলে আসছে! তখন ধুয়া তুলত মুসলিম লীগ! সে বেলায় দলের নামের সাথে মুসলিম যুক্ত থাকলেও আওয়ামী মুসলিম লীগ ‘ভারতের চর’, হিন্দুদের দালাল এসব অপবাদ থেকে মুক্তি পায় নাই! যদিও শেষমেশ এ ধুয়াতে খুব বেশি লাভ হতো না!

২০- যাহোক… যুক্ত ফ্রন্ট হবার পর থেকে আরো নানাবিধ কিছু গন্ডগোলের ভেতর দিয়ে কাহিনী প্রবাহ আগাতে গিয়ে হঠাৎ করেই লেখা শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ হয় লেখক এর পরে আর লেখার সুযোগ পাননি অথবা তার লেখার খাতা পরে হারিয়ে গেছে। … আমার লেখাও বইয়ের মতই হঠাৎ করেই শেষ হতে চলল!!

পুরোটা আবার পড়ে বেশ ভালো বুঝতে পারছি যে এটা মোটেও রিভিউ গোত্রের কিছু হয় নাই! হয়ত এটা বইটা পড়ার জন্যে পাঠককে আগ্রহীও করে তুলবে না। কিন্তু এই বইয়ের রিভিউ কিভাবে করা সম্ভব তা আমার জানা নাই! রিভিউ করতে গেলে বাংলা রচনার মত সোজা সোজা কিছু কথা বার্তা চলে আসবে যে, লেখক অতি মহান নেতা ছিলেন, আজীবন মানুষের তরে কাজ করে গেছেন, জেল খেটেছেন বহুবার… তার এই বইটা পরে আমরা অনুপ্রানিত হব, ইত্যাদি ইত্যাদি!! তাই ও ধরনের কিছু লেখার থেকে বই থেকে সরাসরি কিছু ঘটনা বা লেখকের উক্তি তুলে দেয়াটা বেশি কাজের বলে মনে করেছি।

তবে বইটা পড়ে ব্যক্তি মুজিবকে হয়তো অনেকখানিই উদ্ধার করা যায়। তার রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা, সংগ্রাম সবকিছুরই অনেক ধারনা পাওয়া যায়। যে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য যেই মুসলিম লীগে সমর্থন করে আন্দোলন করেছিলেন পরে সেই মুসলিম লীগের অত্যাচার এবং দুঃশাষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিরোধী দল গঠন করলেন এবং হয়ে গেলেন মুসলিম লীগ আর পাকিস্তানের সর্বোচ্চ শত্রু!
Profile Image for Salema.
107 reviews16 followers
March 18, 2020
This is my attempt to better understanding the origins of my country. Most of my information prior to this was from stories told to me by my parents, or my two Bengali teachers, and from the Internet. I am a Bangladeshi girl, born and raised in an Arab country, educated in Indian and British curriculum. My reference points aren't all that many. Learning about my history is an extracurricular activity and this is my attempt at catching up now.

As is mentioned in the title this is an unfinished memoir of Sheikh Mujibur Rahman - the founding father of Bangladesh. He is fondly remembered as Bangabandhu (meaning Friend of Bengal). In his book he tells you of all the people that played an instrumental role in creating Pakistan - one of which being Huseyn Shaheed Suhrawardy. A Bengali politician that served as a Pakistani Prime Minister for a brief while. During the last leg of colonization, Muslims and Hindus who lived side by side in harmony for generations; started inciting violence against each other. The conception of Pakistan was to allow for a safe space for Muslims. It was to be the salve to those wounds.

The state of Bengal was to constitute as East Pakistan but got split into Calcutta (part of India) and the rest of Bengal. Post Pakistan independence, despite the fact that Bengalis made up 56% of total Pakistan population, the leaders decided that Urdu was to be the only official language. Urdu at the time was not a majority spoken/written language, for Pakistan was composed of Punjabis, Balochis, Sindhis, Bengalis - and they all had their own language. The fight for our language to be reinstated as the official language alongside Urdu, is what started the National Language Movement; and is now celebrated as International Mother Language Day on 21st of February.

You could say the creation of Bangladesh was a result of identity politics, but it was deemed necessary by people that have a rich culture in arts, science, politics and that which had a major global impact. Heavyweight names like Rabindranath Tagore (Nobel Laureate), Kazi Nazrul Islam (poet), Satyajit Ray (filmmaker), Satyendra Nath Bose (physicist of the 'boson particle' fame), Suresh Chandra Bose (liberation fighter) are some of the few Bengalis that have left giant footprints in the sands of time.

Sheikh Mujibur Rahman was the Prime Minister of Bangladesh when he was assassinated in his home along with 15 other family members on August 15th, 1975. It is marked as the National Mourning Day in Bangladesh. He is survived by two daughters who were in Germany at the time; one of whom serves as our current ruling Prime Minister and is the reason why this memoir has been published.

Spearheading the formation of Bangladesh, Mujib was also a champion of treating everyone equally no matter the language/religion/political groups people subscribed too. He is best remembered that way.
Profile Image for Farhana.
315 reviews187 followers
March 17, 2017
MAGNIFICENT writing. লেখার ব্যাপারে আলাদা করে বলার কিছু নেই, তাঁর ব্যক্তিত্বের যে দৃঢ়তা ও তেজ তা লেখাতেই বুঝা যায় । পাকিস্তান হবার পর পর সে সময়ের রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্ত , তাঁর আন্দোলন ও সংগ্রামের কথা পড়ে অন্য রকম অনুভূতি হয়। বইতে আমার আলাদাভাবে বেশি আকর্ষণ করেছে তাঁর স্ত্রীর ভূমিকা, আমার মতে খুবই দৃঢ় এবং অকুতোভয় একজন নারী। বলতে গেলে একটা দেশের জন্য তিনি তাঁর সাধ আহ্লাদ, একটা নিয়মিত সংসার জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, এবং কতখানি সাপোর্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং আস্থা ছিল তাঁদের দুজনের মধ্যে। ছেলেমেয়ে পরিবার সব একা হাতে আগলে রেখেছেন । ফ্যামিলি থেকে এতখানি নিরঙ্কুশ সাপোর্ট পাওয়াটা সত্যিই অসীম ভাগ্যের ব্যাপার ।
Profile Image for Jack Greenberg.
34 reviews7 followers
February 17, 2019
I had wanted to read this book for a very long time, but encountered difficulty in finding a copy.
This edition was published by University Press Limited and is only available for sale in Bangladesh.
While the language is simple, I was very impressed with the careful translation done by Dr. Fakrul Alam.

This book deserves to be read for its tremendous historical value; especially considering how little has been written about Sheikh Mujibur Rahman in languages other than Bengali. The fact that Sheikh Mujib's diaries survived for decades before being rediscovered - their pages brittle and discoloured - is indeed a miracle.

As evident from the title, Sheikh Mujib never finished writing his memoirs. He begins with his birth at Tungipara village near Gopalganj in 1920 and covers events until the end of the United Front Coalition in 1954.

I felt both inspiration and melancholy at various times while reading. Make no mistake — the young Sheikh Mujib was a passionate and charismatic grassroots leader who struggled for Pakistan — an idea which he honestly believed in. At the time of partition, along with Huseyn Shaheed Suhrawardy, he was indispensable in protecting Hindus and Muslims alike from communal violence. My blood boiled as I read about his unjust sojourns in jail as a political prisoner, and the callous disregard shown to him by the Muslim League. Meanwhile, the bravery that he exhibitied during Bhasha Andolôn and the struggle for democratic rights demonstrate that one must never lose hope and always fight against tyranny.

While not much is written about his wife, Renu, I feel that she must have been an incredibly strong woman. She was married to Sheikh Mujib when she was three years old, and he was only thirteen. She was sent to live his family after the death of her grandfather at the age of seven. She endured long periods of loneliness during Sheikh Mujib's time in prison, and she was forced to raise their children single handedly while also cobbling together enough money for their living expenses.

Other sections which I found most interesting included his travels to China, Delhi, and West Pakistan, his relationship with Suhrawardy, and his comments about Maulana Bhashani's stubbornness and unwillingness to make decisions in times of crisis.
3 reviews3 followers
August 24, 2018
 এই বই টাকে লীগ ফ্যানাটিক, লীগ বিরোধী, বাকশাল পন্থী, বাকশাল বিরোধী - কোন এংগেল থেকেই পড়া উচিত না। একজন মানুষ, যাকে আমরা চিনি না, তার সম্পর্কে জানতে হলে আমরা তার কাজ যেভাবে দেখি, ঠিক সেভাবে পড়া উচিত। কারিকুলাম বা বড়দের থেকে শোনা ইতিহাস জুড়ে আমাদের সামনে বঙ্গবন্ধু এর যেই অবয়ব টা সামনে থাকে, তা ১৯৬০-৭৫ এর সময়কালের। কিন্তু তার আগের বঙ্গবন্ধুকে চেনা টা কম জরুরী না। শৈশব, কৈশোর, যৌবন, মধ্যবয়স এর মানুষ টাকে জানলে তার চিন্তা চেতনা, Series or Film এর ভাষায় যাকে Character Development বলা হয়, সেই Metamorphosis টা খুব ভালভাবে জানা যায়। একরোখা, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, মৃত্যুকে না গোণা, আদর্শের জন্য জেল এ যাওয়াকে ডালভাত মনে করা, Go-get-it attitude এর অধিকারী একজন মানুষ কে জানার জন্য এই বই টা অবশ্যপাঠ্য। নিজের চোখের সামনে যেন ব্রিটিশ আর পাকিস্তান আমল কে দেখা হয়ে গেল।
Profile Image for Bashar.
4 reviews13 followers
September 19, 2017

নানা বই শুরু করলেও শেষ করতে পারি না। গ�� কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি বই শুরু করেও মাঝপথে বা আদোপথে বাদ দিয়েছি। এক বই থেকে আরেক বই-এ আগ্রহ চলে গ্যাছে। আগে এটা নিয়ে কষ্ট লাগতো এখন পাত্তা দেই না। এটা বই-পড়া অভিজ্ঞতার অংশ-ই ধরে নিছি। যা গিয়া যা থাকে। বোরড হওয়া যাইবো না। বছর দুই আগে একবার “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” পড়া শুরু করছিলাম। খুলনা থেকে ঢাকা আসার পথে গোপালগঞ্জ-এ আসতে মনে পড়ল‌ো ব্যাগে বইটা আছে, পড়া শুরু করলাম। যদ্দূর মনে পরে অল্প কয়েক পৃষ্ঠার বেশি আগাইতে পারি নাই। গাড়ির ঝাঁকুনি, ভ্রমণ ক্লান্তি এইসব কারণ হইতে পারে। আবার প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা বইটার তেমন মজারও না এর পরের অংশের তুলনায়।


কিছুদিন আগে আবার পড়া শুরু করলাম। একবারে পুরোটা পড়ার তাকত নাই। একদিনে দশ পৃষ্ঠা করে টার্গেট নিয়ে আগানোর চেষ্টা করলাম। পরে দেখলাম এই বই নিজেই আমাকে টেনে রাখছে। কারণ হতে পারে শেখ মুজিবের গল্প বলার ধরণ, হতে পারে যে গল্প তিনি করেছেন সেগুলোর অভিনবত্ব, হয়তো দুটোই। ভারত ভাগ, বাংলা ভাগ, সাম্প্রদায়িক-দাঙ্গা, পাকিস্তান প্রজেক্টের মুখ থুবরে পড়া, ভাষা আন্দোলন, মুসলিম লীগের ফরমিডেবল বিরোধীদল আওয়ামীলিগের যাত্রা, পাকিস্তানের পশ্চিমমুখিতা, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, ফজলুল হক। ভাসা ভাসা জানা ছিলো এসবের অনেক কিছুই কিন্তু এবার-ই প্রথম এই বিস্তারিত সময়ের সামনের সারিতে বসে দেখা এবং কখনো পার্শ্ব কখনো মূল চরিত্রে ভূমিকা রাখা কারো অভিভাষণ পড়লাম। প্রথমত এক কথায় অনন্য। আমি এর আগে কারো লেখা পড়ে বা কারো সম্পর্কে জেনে এতোটা অভিভূত হইনি। যদিও আমার পড়া এবং জানা দুটোই কম, তারপরও।


ব্রিটিশ সরকারের সেরেস্তাদার বাবা-র প্রভাব ছিল মুসলিম লীগে জয়েন করার এবং সেখানে কাজ করার ক্ষেত্রে। এ প্রভাব অবশ্য বেশ সাটল ছিলো। আমার মনে হয়েছে অথরিটি ফিগারের প্রভাব শেখ মুজিবরের উপর সবসময়ই ছিলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে সেটা লক্ষণীয়। উদাহরনস্বরূপ, অনিচ্ছা সত্ত্বেও “আওয়ামী মুসলিম লীগ” নামকরণ এবং নামমাত্র দলের সাথে যুক্তফ্রন্টে যোগদান। গোপালগঞ্জে মুসলিমলীগের সমাবেশে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আসলে, শেখ মুজিবর “শহীদ সাহেব” করে সম্বোধন করেছেন বইয়ে, সেখানেই প্রথম দেখা হয় পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম নেতার সাথে প্রান্ত-কৈশরে থাকা সমাবেশ স্বেচ্ছাসেবক মুজিবরের সাথে, যিনি পরবর্তিতে নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশ আন্দোলনের। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেখ মুজিবরের রাজনৈতিক জীবনে প্রবল প্রভাব বিস্তারি ছিলেন। মুজিবুর ভালোবাসতেন শহীদ সাহেবকে, ভক্তি করতেন তার বিচার-বিবেচনাবোধ। উদারতা, জনগণের প্রতি ভালবাসা, রাজনৈতিক ত্যাগ স্বীকার শহীদ সাহেবের এসব বৈশিষ্ট্য প্রশংসার চোখে দেখতেন মুজিবুর যা নিজেও ধারণ করার চেষ্টা করতেন। যুক্তফ্রন্টের কনিষ্ঠতম মন্ত্রী ছিলেন শেখ মুজিবুর, তৎকালীন গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদের সাথে দেখা করতে গেলে শেখ মুজিবুরকে কাছে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “লোকে বলে, আপনি কমিউনিস্ট, একথা সত্য কি না?” শেখ মুজিবুর উত্তর দেন, “যদি শহীদ সাহেব কমিউনিস্ট হন, তাহলে আমিও কমিউনিস্ট। আর যদি তিনি অন্য কিছু হন তবে আমিও তাই।” কমিউনিজমকে সন্দেহের চোখে দেখতেন শেখ মুজিবুর। সে সন্দেহ যতখানি না ভাবাদর্শগত তারচেয়ে বেশী প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে। নিজেকে দেখেছেন একজন সমাজতন্ত্রী হিসেবে। অর্থনৈতিক সাম্য এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি ছিল সে ভাবনায়। যেমন আওয়ামী লীগের প্রগতিশীল অংশের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে একবার বলেন

“আওয়ামীলীগের মধ্যে অনেক নেতা ও কর্মী আছে যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে; এবং তারা জানে সমাজতন্ত্রের পথই একমাত্র জনগণের মুক্তির পথ। ধনতন্ত্রবাদের মাধ্যমে জনগণকে শোষণ করা চলে। যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা কোনদিন কোন রকমের সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করতে পারে না। ”
যদিও এই ভাবনার ধারণ শুরু থেকেই শেখ মুজিবুর রাখতেন কিনা বোঝা যায় নি। বরং শুরুতে তাকে পাকিস্তান আন্দোলনের জন্যই বেশি অন্তপ্রাণ দেখা যায়। এবং আমরা-ওরা চিন্তাসূত্রের প্রভাব দেখা যায়। দিল্লিতে মুসলিমলীগের কনভেনশানে গিয়ে ফজলুল কাদের চৌধুরীর(সাকার বাবা) সৌজন্যে তাজমহল ঘুরতে গিয়ে মাগরিবের আজান শুনে লেখকের আশংকা, “পাকিস্তান হওয়ার পর (ভারতের তাজমহলে) আজান হয় কিনা জানি না।” সে বার ফকাসহ বাকিদের নিয়ে দিল্লির ফতেপুর সিক্রি ও সেকেন্দ্রা, আগ্রার দুর্গ দেখে মুসলিম শাসন নিয়ে নস্টালজিয়ায় বিমগ্ন হন শেখ মুজিবুর। অথচ ৬-৭ বছর পরেই ১৯৫১ সালে পূর্ব-পাকিস্তানের ডেলিগেটদের একজন হয়ে নতুন চীনের আয়োজিত শান্তি সম্মেলনে গিয়ে “ফরবিডেন সিটি”, সম্রাটরা পূর্বে তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে এখানে থাকতেন যেখানে অন্যদের প্রবেশ নিষেধ ছিল, ঘুরে ভাবলেন, “ভারতে লালকেল্লা, ফতেহপুর সিক্রি এবং আগ্রাকেল্লাও আমি দেখেছি। ফরবিডেন সিটিকে এদের চেয়েও বড় মনে হল।…………. দেখলাম ও ভাবলাম, রাজ-রাজড়ার কাণ্ড সব দেশেই একই রকম ছিল। জনগণের টাকা তাদের আরাম আয়েশের জন্য ব্যয় করতেন, কোন বাধা ছিল না।” শান্তি সম্মেলনের এই ভ্রমণ শেখ মুজিবুরের স্বাধীনতা চেতনা গড���ায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। সমাজতন্ত্রের প্রতি সুদৃষ্টি তৈরীতেও প্রভাব ছিলো মনে করি। এখানেই প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শেখ মুজিবুর পূর্ব-পাকিস্তানের হয়ে বক্তৃতা করেন বাংলা ভাষায়! বেশ গর্বিত ছিলেন এ নিয়ে।

গোপালগঞ্জে ও এর আশেপাশের এলাকায় ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন শুরু থেকেই। আস্তে আস্তে সেটা বাড়তে থাকলো। যেখানেই যেতেন পরিচিত মানুষ ছিল। এতো নাম ঘটনাক্রমসহ মনে রেখেছেন কী করে! রাজনৈতিক নেতৃত্বের মনে হয় এটা বিশেষ গুণ। প্রথম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন গোপালগঞ্জ থেকে মুসলিম লীগের বিপরীতে ১৯৫৪’তে(যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন)। সেখানে তার বিরুদ্ধে প্রচারণা ছিলো “... ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, ধর্ম শেষ হয়ে যাবে”, পীর মাওলানারা ফতোয়া দিলেন। যদিও ধোপে টেকেনি। ঐদিনে দশ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন। জনগন টাকা দিয়ে, টাকা তুলে মুসলিম লীগের বিত্তশালী প্রার্থীর বিপরীতে তাঁকে জয়ী করেছে। লিখেছেন, “.... গ্রামের মেয়েরা আমাকে দেখতে চায়। আমি ইলেকশনে নামার পূর্বে জানতাম না, এ দেশের লোক আমাকে কত ভালবাসে। আমার মনে একটা বিরাট পরিবর্তন এই সময়ে হয়েছিল।”


রাজনৈতিক জীবন বিস্তৃত করতে গিয়ে পারিবারিক জীবনে সময় দিতে পারেন নি। এ নিয়ে বরাবর-ই খারাপ লাগা ছিল জাতির পিতা-র। বইয়ের ব্যাক-কাভার থেকে,

“ একদিন সকালে আমি ও রেণু(স্ত্রী) বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু (শেখ হাসিনা) ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর আব্বা আব্বা বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, “হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।” আমি আর রেণু দু’জনই শুনলাম। আস্ত আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, “আমি তো তোমারও আব্বা।” কামাল আমার কাছে আসতে চাইতো না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল।”
শেখ মুজিবুর কামালের একমাস বয়সে জেলে যান তাই কামাল তাকে চিনতে পারে নি। বাবাকে খুব কম সময়ের জন্যেই কাছে পেয়েছিলেন কামালেরা। মায়ের কাছে বড় হয়েছেন। স্ত্রীর এই অসামান্য ত্যাগ এবং অবদানের কথা বারবার স্মরণ করতে দেখেছি লেখককে।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার বাতিল করে গভর্নর শাসন চালু হলে আবারও গ্রেপ্তার হন শেখ মুজিবর রহমান, চতুর্থবারের মত, সেখানেই এ বই-এর শেষ। এ সিরিজের পরবর্তি বই “কারাগারের রোজনামচা” পড়ার আগ্রহ এখন তাই তুঙ্গে।


পাকিস্তান স্বাধীন করেও মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে পারেননি বলে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন, বাঙ্গালি-জাতি চেতনাবোধ নির্মাণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তখন মুসলিম লীগের স্বৈরাচারী শাসন ও অবিচারের বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন আফসোস সে লড়াই এখনও প্রাসঙ্গিক অথচ সংগ্রাম সমান জাগরূক নয়। বইয়ের ১১০ পৃষ্ঠা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুসলিম লীগের অপশাসনের চিত্র তুলে ধরে লেখা কয়কটি লাইন উল্লেখ করছি, এ ছবি আমাদের বেশ পরিচিত।

“মুসলিম লীগ নেতারা একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছিল যাতে কেউ সরকারের সমালোচনা করতে না পরে। মুসলিম লীগ নেতারা বুঝতে পারছিলেন না, যে পন্থা তারা অবলম্বন করেছিলেন সেই পন্থাই তাদের উপর একদিন ফিরে আসতে বাধ্য। ওনারা ভেবেছিলেন গুণ্ডা দিয়ে মারপিট করেই জনমত দাবাতে পারবেন। এ পন্থা যে কোনদিন সফল হয় নাই, আর হতে পারে না- এ শিক্ষা তারা ইতিহাস পড়ে শিখতে চেষ্টা করেন নাই।”

Profile Image for Pritam.
25 reviews3 followers
November 4, 2021
পড়তে পড়তেই হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেল বইটা।বঙ্গবন্ধু তথাকথিত লেখক ছিলেন না।কিন্তু তার লেখনী খুবই ভালো ছিলো।কোনো বিরতি ছাড়া আরামসে পড়া যায়। তার ব্যক্তিগত জীবনের অনেককিছুই উঠে আসছে এরমধ্য দিয়ে। আফসোস হয়, জাতির জনককে যদি নৃশংসভাবে হত্যা না করা হত তাহলে হয়তো আমরা তার পুরো আত্মজীবনী পেতে পারতাম
Profile Image for Asim Nondon.
Author 1 book9 followers
January 19, 2018
বইটা যেইভাবে কালেক্ট করছি, আমি আর ইফতি ছাড়া দুনিয়ার বেবাকজন তার রহস্য জানে না। বইয়ের প্রথম কয়েকটা পেইজ নাই। তবে বইয়ের মূল শুরুর থেকে পেইজ আছে সব। এইটা একটা বিচ্ছিন্ন দারুণ ঘটনা। বই খুলতেই যে ছেঁড়া পেইজটা পাই তাতে লেখা, "একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি।একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়।এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা,অক্ষয় ভালোবাসা,যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।"

বেবাকজনের রহস্যরে খোলাসা করে বলি, এইটা চুরি করা বই। বিসমিল্লাহ্ বইলা শুরু করলাম, চুরির সুখ আহরণে!

"কোন নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন, তার প্রতিবাদ করা এবং তাকে বুঝিয়ে বলার অধিকার জনগণের আছে"। একখানা দারুণ কথা লেখক বলছেন। লেখক এইখানে যে স্মৃতিচারণ আর ভ্রমণকাহিনী বলে গেছেন তা চমকপ্রদ না হইলেও, আনন্দদায়ক। আর তাঁর রাজনৈতিক ভাবধারার সম্পূর্ণ যদিও তিনি লিপিবদ্ধ করেন নাই--বলে মনে হয়, তবুও বেশ খানিক স্বচ্ছ।তবে পড়তে গিয়া যে অনুযোগটা পাঠক হিসাবে আমার কাছে লাগতেছে, তা হইলো সাল-তারিখের উল্লেখ।বেশ কিছু জায়গায় লেখক সাল-তারিখের উল্লেখের দায় এড়ায়া গেছেন।হয়তো অবচেতন ভাবেই গেছেন।যেহেতু এইটা একটা ঐতিহাসিক অনুলিপি, তাই পাঠক হিসাবে এই অনুযোগটারে আমি এড়ায়া যাইতে পারতেছি না।

তো লেখক যেহেতু একজন বড় মাপের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং লেখাটা অসমাপ্ত আর তাছাড়া তিনি নিজেই বলছেন, লেখাটা আসলে অনুরোধের ঢেঁকি গেলা-স্বরূপ এবং লেখার সময়কালে তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন, তাই লেখা সম্পর্কিত একটু দায়সারা অবস্থারে আমি পাঠক মেনে নিতেছি।

পাঠ করতে গিয়ে লেখকের ভ্রমণ এবং বিচক্ষণতার একটা ঘটনা আমারে যারপ���নাই আনন্দিত করছে। লেখক একবার ১৯৫২সালের দিকে চীনে যান, শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে। মোট ৩৭টা দেশের ৩৭৮ জন সদস্যের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। এবং শান্তি সম্মেলনে তিনি বাংলায় বক্তব্য রাখেন। তিনি কিন্তু ইংরেজি বলতে পারেন না, এইরকম ঘটনা না। কিন্তু তিনি নিজের ভাষারে সেই ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনে উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে পরিচয় ঘটান। এইখানেই তার বিচক্ষণতার সুস্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। তাছাড়া আরেকটা যে কথা তিনি বলে গেছেন তা আমারে নাড়া দিছে। লেখক চীনের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণকালে নিজ চোখে যে ব্যাপারগুলা দেখছিলেন তার মধ্যে থেকে বলেন, "একটা মসজিদে গিয়েছিলাম,তারা বললেন,ধর্মে কর্মে বাধা দেয় না এবং সাহায্যও করে না"। মানে চীন স্বাধীনতা পায় ১৯৪৯ সালে,আর মাত্র ৩ বছরে রাষ্ট্রকে এমন একটা রূপে সাজাইতে শুরু করে যার বর্তমান চেহারা আজকে আমরা দেখতে পাই। এবং লেখক নিজেও তা বিচক্ষণ চোখে দেখছিলেন। এবং নিজের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরে সমৃদ্ধ করতে পারছিলেন বলে অনুমান করা যায়।

অবশেষে শেষ করে ফেলছি। যত যাই বলি, একটা স্বাভাবিক জাদুরূপ আকর্ষনে পাঠ শেষ হয়া গেছে। কিন্তু শেষ হইয়াও যেন হইলো না শেষ। প্রশ্ন থেকে যাইতেছে মনে। যেহেতু তিনি একজন বিরাট মাপের পাবলিক ফিগার, তাই অসমাপ্তই থেকে গেল জানার পিপাসা। তাঁর ভাষ্যে-লেখনীতে এক রকমের টান কাজ করছে পুরাটা লেখায়। লেখা শেষে কিছু সংযোজন আছে, যা আমারে কিছুটা সন্দেহের দিকে ঠেলে দিছে। যারা লাস্টের সংযোজনটা করছেন তারা অবধারিতভাবেই নিরপেক্ষ থাকতে পারেন নাই। অপরদিকে লেখক যে তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ডে আর জনগণের সেবায় গোটা-জীবনটারেই ত্যাগ করে দিছেন, তা সুস্পষ্ট ধরা যায় এই লেখায়। বঙ্গবন্ধু রাজনীতির জায়গায় যে বিচক্ষণ ছিলেন তা সন্দেহাতীত। আবার কিছু দূর্বলতাও তার ছিল বলে মনে হয়। উদারতা তার সবচেয়ে বড় দূর্বলতা ছিল বলে মনে হয়! আমার খালি একটা জায়গায় খটকা লাগতেছে, বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করতেন। এই কথায় আমি সন্দেহ করি না। কিন্তু স্বাধীনতা পর���র্তী সময়ে সেই তিনিই কেন পাকিস্তানে ইসলামী সম্মেলনে (ওআইসি) নিজের দেশরে উপস্থাপন করলেন? এই দিক দিয়ে তিনি কিছুটা দিশেহারা পরিচয় দিছেন। এইখানে আমার মনে পড়ে ১৯৫২ সালে তার চীন ভ্রমণের স্মৃতি। হয়তো স্বাধীন দেশের হাজার সমস্যার চাপে তাকে দিশাহীন হইতে হইছিল। কিংবা এটাও হইতে পারে তরুণ বয়সে যে ভাবাদর্শরে তাঁর ভালো লাগছিল, বয়সকালে এসে সেই ভাবাদর্শে তিনি আস্থা রাখতে পারেন নাই।

একটা মানুষ জনতার কাছে শুধু নিজের ভালোবাসা নিয়ে দাঁড়িয়ে হয়ে উঠলেন একজন প্রবল ব্যক্তিত্ব। তিনি এমন বিশ্বাসী রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন যে, স্বাধীনতাপূর্বে পাকিস্তান সময়কালে এক নির্বাচনে--তার অর্থবল কম থাকায় জনগণ তাঁরে নজরানা দিয়ে অর্থের জোগান দেন। তিনি যে পরিমাণে দেশের জন্য ত্যাগ করে গেছেন,কাজ করে গেছেন সারাটা জীবন, তা তাঁকে ভালোবাসায় যেমন পূর্ণ করে তুলছে তেমন শত্রুতে ঘিরেও ফেলছে। শুধু ভালোবাসা আর বিশ্বাসে মানুষ তার কথায় বিশ্বাস করে ঝাঁপায়া পড়ছে জীবন দিতে। অবশ্যই তিনি একজন রাজনৈতিক কবি ছিলেন বলে প্রতিভাত হয়।

লেখকের লেখা থেকে সুস্পষ্টভাবে সেই সময়কার পলিটিক্যাল ক্যাচাল,ষড়যন্ত্র আর মানুষের ক্ষমতার লোভের কুকীর্তি পষ্ট হয়ে যায়। তাঁর রক্তে আদর্শগত ভাবেই যেন আন্দোলন ছিল।

তো বইটা একজন বাঙালির জন্য অবশ্য পাঠ্য বলে আমার মনে হয়।

শেষ করবার আগে বলতে চাই,ধন্যবাদ বঙ্গবন্ধু। আর ভালোবাসা আপনারে।
Profile Image for سمية .
86 reviews56 followers
March 6, 2021
"As a man, what concerns mankind concerns me. As a Bengali, I am deeply involved in all that concerns Bengals. This abiding involvement is born of and nourished by love, enduring love, which gives meaning to my politics and my very being"
- Bangabondhu Sheikh Mujibur Rahman, the father of our nation 🇧🇩 (Unfinished Memoirs, 3 May 1973)


রাজনীতির প্রতি বরাবরই earnest interest আমার রয়েছে। এর bad practice.....না থাক, না বলি। জনমানুষকে নিয়ে সব প্রতিকূলতা উতরে সকলকে নিয়ে ভাল থাকার মতো মানুষ এ তল্লাটে খুঁজে না পাওয়ার দোষ হয়ত এই কলিযুগের। একজন ছিলেন, যার হাত ধরে নতুন স্বপ্নে বুঁদ হয়ে উঠছিল মানুষ। আমাদের সেই প্রথম অভিভাবকের চোখে ইতিহাসের মোড়গুলোয় ভ্রমণ করার পুরো সময়টায় বারবার আবেগতাড়িত হয়ে যাচ্ছিলাম। এমন নেতার অনুসারীদের দায়িত্ব তো বিরাট বড় হওয়ার ছিল মনে হচ্ছিল বারবার।
এত সহজ, সরল, সাবলীল লেখনশৈলীর তারিফও সেরে নেয়া লাগে। আর এত বিশদ বর্ণনা! কি প্রখর স্মৃতিশক্তি ই না ছিল তার!
১৯৫৪ সালে এসে আর এগোনো গেল না। এই অসমাপ্ততা আক্ষেপের। লেখাটা যদি শেষ করে যেতে পারতেন!
শেষ করব একটাই আশা নিয়ে, তাঁর আদর্শ যারা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যাবে। তারা তাঁর মান রাখুক।


"একদিন সন্ধ্যায় বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়ে জমাদার সাহেব চলে গেলেন।ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছােট্ট কোঠায় বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি , শহীদ সাহেবের কথা। কিভাবে তার সান্নিধ্য পেয়েছিলাম , কিভাব তিনি আমায় কাজ করতে শিখিয়েছিলেন।হঠাৎ মনে হলাে ঘটনাগুলাে যতদূর মনে আছে লিখে রাখতে আপত্তি কি ?"
- শেখ মুজিবুর রহমান
Profile Image for Ashis Saha.
101 reviews23 followers
September 9, 2021
শেখ মুজিবের লেখা আত্মজীবনী পড়তে গিয়ে যে মাঝে-মধ্যেই হাই উঠবে সেটা ধরেই নিয়েছিলাম। তিনিতো আর সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো রসিক লেখক ছিলেন না, ছিলেন রাজনীতিবিদ। ৫০ বছর আগে তাঁর লেখা বইতে সাধু ভাষার পাশাপাশি ঐতিহাসিক কাহিনীর নিরস বর্ণণা পাবো - এর বেশি আশা ছিলো না। তবুও পড়া শুরু করেছি উনি শেখ মুজিব বলেই, তাঁর আত্মোপলব্ধির খোঁজে।

তো, এক অনুচ্ছেদ পড়তে-না-পড়তেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে হলো। এ কী পড়ছি আমি?

বন্ধুবান্ধবরা বলে, “তোমার জীবনী লেখ”। সহকর্মীরা বলে, “রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।” আমার সহধর্মিনী একদিন জেলগেটে বসে বলল, “বসেই তো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী।” বললাম, “লিখতে যে পারিনা; আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়!" আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।”


আহা, কী ঝরঝরে লেখা! পড়তে কী আরাম! একেবারে মুজতবা আলীর লেখার মতোই। “সম্পাদকদের কাজ বেশ ভালো হয়েছে” - যেই এমনটা ভাবতে শুরু করেছি, তখনই দেখি ২য় পৃষ্ঠায় মূল পান্ডুলিপির ১ম পৃষ্ঠার ছবি। আমার চোখতো ততক্ষণে ছানাবড়া। এ লেখা যে শেখ মুজিব নিজেই লিখে গেছেন — ঝরঝরে ভাষায়। সম্পাদকরা কিছু যতিচিহ্ন আর বানান ঠিক করেছেন মাত্র। এরপর থেকে অদ্ভূত মুগ্ধতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।

পড়তে-পড়তে ইতিহাসের সাথে যেমন দেখা হয়, তেমনি ক্ষণে-ক্ষণেই দেখা মেলে জীবনলব্ধ উপলব্ধির। যেমন -

অনেক সময় দেখা গেছে, একজন অশিক্ষিত লোক লম্বা কাপড়, সুন্দর চেহারা, ভাল দাড়ি, সামান্য আরবি ফার্সি বলতে পারে, বাংলাদেশে এসে পীর হয়ে গেছে। বাঙালি হাজার হাজার টাকা তাকে দিয়েছে একটু দোয়া পাওয়ার লোভে। ভাল করে খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এ লোকটা কলকাতার কোন ফলের দোকানের কর্মচারী অথবা ডাকাতি বা খুনের মামলার আসামি। অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙালির দুঃখের আর একটা কারণ।


রাজনীতির বাইরে কবি-সাহিত্যিক-লেখক-সঙ্গীতজ্ঞদের প্রতি শেখ মুজিবের যে প্রবল আগ্রহ আর সম্মান - তার প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন জায়গায়। উনি পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে যেমন রবীন্দ্র-নজরুলের কবিতা শুনিয়েছেন, তেমনি চীনে শান্তি সম্মেলনে বিখ্যাত লেখক আসিমভ আর তুরস্কের কবি নাজিম হিকমতের সাথে দেখা হওয়ার কথা গর্বভরে বলেন, আবার সমসাময়িক আব্বাসউদ্দিন-মুনীর চৌধুরীদেরও স্মরণ করেন গুরুত্বের সাথে।

এই আত্মজীবনী অসমাপ্ত থাকার কারণে এক বড় আক্ষেপও থেকে যায়। এরপর কী হলো? ছয় দফা আন্দোলনের উপলব্ধি কীভাবে এসেছিলো তাঁর মধ্যে? স্বাধীনতার সময় তাঁর ভাবনা কী ছিলো? যিনি এত গভীরভাবে অনুধাবন করেন গণতন্ত্রে শক্তিশালী বিরোধীদলের ভূমিকার কথা, তিনি কীভাবে - কোন্‌ পরিস্থিতিতে - কী কারণে - কী যুক্তিতে বাকশাল গঠন করেছিলেন? আহা, যদি জানা যেতো…
Profile Image for Rimon Islam.
1 review
November 22, 2023
অসাধারণ একটা বই..জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জীবনী বাংগালী জাতির জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা। যতই সামনের দিকে আগাচ্চছি ততই ভাবছি একটা মানুষ তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছে জাতির জন্য,দেশের জন্য।
বই টা অব্যশই পড়া উচিত
Profile Image for Raihan Ferdous  Bappy.
137 reviews5 followers
October 5, 2024
শনিবার, ৫ অক্টোবর
দুপুর ২:৫৬।

দিন ভালো যাচ্ছে না। রিডিং ব্লকে পড়ে আছি। এছাড়াও ব্যক্তিগত জীবনেও সমস্যার সমাহার। তাই বই পড়ার গতি মন্থর বললেও বেশি হয়ে যায়। মন্থরের নিচে কিছু থাকলে সেই শব্দটা সমীচিন হবে।

যাইহোক, অবশেষে, শেষ করলাম শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই "অসমাপ্ত আত্মজীবনী"। 'অবশেষে' শব্দটা ব্যবহার করলাম কারণ আসলেও অনেক বেশি সময়ই লাগিয়ে ফেলেছি বইটা শেষ করতে। সেটা বড় কথা নয়। মোদ্দা কথা হচ্ছে, শেষ করেছি। এবার আসি বই কেমন লাগলো সেই ব্যাপারে।

এই বই যখন হাতে নিয়েছিলাম তখন ভেবেছিলাম, কাঠখোট্টা টাইপ লেখা হবে। কারণ তিনি রাজনীতিবিদ। রাজনীতিবিদের লেখা কাঠখোট্টা টাইপ হবে এইটাই তো স্বাভাবিক। তাই না? কিন্তু পড়তে গিয়ে রীতিমতো অবাক হয়ে গেছি। এতো সাবলীল লেখাও একজন রাজনীতিবিদের হাত থেকে বের হয়? বইটা পড়তে গিয়ে ইতিহাসের দেখাও পেয়েছি। জীবনকে কিভাবে তিনি উপলব্ধি করেছেন সেইটার দেখাও পেয়েছি। সবমিলিয়ে, বইটা আসলেও চমৎকার। এই লোক ভাষা দিয়ে জাদু করতে পারেন এই কথা মানতেই হবে। আরেকটা জিনিস ভালো লেগেছে তাঁর। সেটা হচ্ছে, তিনি যখন সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কোনো কথা বলেছেন তখন খুব সুন্দরভাবে শ্রদ্ধাবাচক শব্দগুলা লিখেছেন। যেটা আসলেও দৃষ্টিনন্দন ছিলো। জেলে থাকার সময়টা কিরকমভাবে তিনি ��াটিয়েছেন সেটা না পড়লে আপনি বুঝবেন না।

সবমিলিয়ে, বেশ ভালো লেগেছে। যাদের রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে তাদেরও পড়া দরকার। যাদের শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানার ইচ্ছা আছে তাদেরও বইটা পড়া উচিত। অজানা অনেককিছুই জানতে পারবেন। এতোটুকুই বলবো, শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্লেষণাত্মক লেখায় আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য।
Profile Image for Mir AlMasud.
10 reviews1 follower
September 15, 2015
তার নিজের হাতে লেখা ও তার মেয়েদের হাতে সম্পাদিত বইটিতে তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকের দিনলিপি এখানে তিনি তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন । তার লেখার ভঙ্গি অনেকটা গল্পের মতন; একটু যেন সৈয়দ মুজতবা আলির স্টাইলটা আসে । আড্ডার আমেজ আছে ; অতটা যদিও সরস বর্ননা নয়, তবে পরের অনুচ্ছেদটা পড়তে ইচ্ছা করে। শেখ মুজিব বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচে উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব।তার মানসজগতের পরিচয়ের খোজ নেবার ইচ্ছা বাঙালির হতেই পারে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই । এই বইয়ের ঘটনাবলি ১৯৪৩ থেকে ১৯৫৫ সময়কার । তখনো আইয়ুব খান ক্ষমতায় আসেন নি। ইস্কানদার মির্জা মাত্র দৃশ্যপটে হাজির হচ্ছেন।

শেখ মুজিবের শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে তেমন একটা ধারনা পাওয়া যায় না এই বইতে। তার নিজের লেখাতেও তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দির ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছেন প্রায়ই; তবে সংগঠক হিসবে তিনি যে অসাধারন তার লেখাতেও তা স্পষ্ট। ১৯৪৩ এ যখন মুসলিম লীগকে অভিজাতদের ড্রয়িংরুম থেকে বের করে রাজপথে নামানো হচ্ছে তার মূল পরিকল্কপক সোহরাওয়ার্দী আর কর্মী এই শেখমুজিব। সেই মুসলিম লীগ যে অবিভক্ত বাংলায় সরকার গঠন করল তার পেছনে তার অসামান্য অবদান তার। ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগের মেরুদন্ডহীন শীর্ষ নেতারা যখন নবগঠিত রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়ে একের পর এক পাঞ্জাবি আমলাদের হাতে দেশ তুলে দিচ্ছিলেন। তখন একটি বিরোধি দলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। দেশপ্রেমিক মুসলিম লীগের নেতারা তখন কোনঠাসা ক্ষমতায় থাকা নেতাদের কাছে। তাদের নিয়ে ভাসানির সভাপতিত্বে গঠন করা হল আওয়ামী লিগ। এই দলটাও গুছিয়ে দিলেন মূলত শেখ মুজিব। আওয়ামী লিগের ভাসানি আর কৃষক প্রজা পার্টির ফজলুল হক বার্ক্যধজনিত কারনে চারিত্রিক দৃঢ়তা দেখাতে পারছেন না। আজ এক বলছেন তো কাল আরেক কথা বলছেন।দল প্রতিদিন ভাঙে আর গড়ে। শেখ মুজিব তাদের দুজনের উপর বিরক্ত কিন্তু একবারও মুখের উপর কিছু বলছেন না। তার সততা আর স্পষ্টবাদিতার জন্যই তাকে মানুষ বিশ্বাস করত। আর নিজে বড় সরকারি পদে না থেকেও সরকারে যাবার জন্য শেখ মুজিবকে দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করিয়ে নেয়াটা তখনকার বড় নেতাদের জন্যও অনেকটা অপরিহার্য ছিল। পার্টির হয়ে সভা করছেন, জনগনের কাছে কখনো আওয়ামিলীগের বক্তব্য তুলে ধরছেন, কখনো যুক্তফ্রন্টের যৌক্তিকতা; আর দুদিন পর পর জেলে ঢুকছেন। দ্বিগুন জনপ্রিয়তা নিয়ে আবার বের হয়ে আসছেন। এই অসমাপ্ত আত্মজীবনিতে এর চে বেশি খুব একটা ইনফরমেশন নেই ।

প্রথম ৭৫ পৃষ্ঠা উঠতি রাজনীতিকদের জন্য কাজে লাগতে পারে।এই অংশেই মূলত তিনি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে করতে তাদের মানুষ হয়ে উঠছেন। একটা সমাজের নেতা হতে হলে সেই সামাজের একজন হতে হয়। শেখ মুজিব সেটা হয়ে উঠেছিলেন মূলত তার স্কুল জীবনেই। তবে এই অংশে যে ভাষায় তিনি হিন্দু বাড়ির লোকজনের মানসিকতার সমালোচনা করেছেন এই যুগে হলে তাকে মৌলবাদি ট্যাগ খেতে হত সন্দেহ নাই। অবশ্য পার্টিশনের পরে এই প্রতিবেশিদের যেন দেশ ছাড়তে না হয় তার জন্যে নিজেই অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।

জেলে বসে শেখ মুজিব এই ডায়রি লিখছেন। ডায়রীর শেষ দুই তৃতীয়াংশে প্রতিটা ঘটনার বর্ননায় মুসলিম লিগের প্রতি তীব্র সমালোজনা ছুড়ে দিচ্ছেন। মুসলিম লীগ আমলা নির্ভর হয়ে যাচ্ছে, গভর্নর জেনারেল সব ক্ষমতা নিয়ে নিচ্ছে, বিরোধি দলকে সহ্য করা হচ্ছে না, বিরোধি নেতাদের নিরাপত্তা আইনের অজুহাতে জেলে ভরা হচ্ছে। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে মুসলিম লীগের যেসব আচরনের সমালোচনা তিনি নিজে করছেন ঠিক একই আচরন তিনি নিজে করেছেন ৭২ থেকে ৭৫ অব্দি। শেরে বাংলা আর ভাসানির উপর ঠিক যে কারনে তিনি ��িরক্ত হচ্ছেন তেমনি তার আচরনে বিরক্ত হচ্ছেন তাজউদ্দিনেরা।

বইটা অসম্পূর্ন। এবং এটা থেকে বঙ্গবন্ধুর পরিনত বয়সের রাজনৈতিক দর্শনের কোন খোঁজ পাওয়া যায় না । যে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপকার হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছিলেন তার শুরুর সময়টার কিছু ধারনা পাওয়া যাবে মাত্র। তবে প্রথম ৭৫ পৃষ্ঠা উঠতি রাজনীতিকের চিন্তা জগতের বাড়ির লিভিংরুম হতে পারে। রাজনীতিক হতে হলে কতটা ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুতি থাকা উচিত তার একটা ধারনা পাওয়া যাবে এই বইতে।
March 12, 2021
এর আগে লেখকের 'কারাগারের রোজনামচা' পড়ার সময়ও দেখেছি, ভাষা দিয়ে লোকদের জাদু করতে পারেন। তা সেটা তার মুখের ভাষা দিয়ে যে পারতেনই এটা তো জানা ইতিহাস। লেখালেখির মানুষ ছিলেন না কোনদিনও, তবুও যা-ই লিখে গেছেন তাতেই তাঁর ব্যক্তিত্বের প্রবল ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। রাজনীতি ও ইতিহাস নিয়ে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত, ভারতবর্ষের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন বা ষাটের দশক থেকে শুরু করে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে যদিও বা কিছু জ্ঞান রাখি, এর মাঝে পাকিস্তানের জন্য ভারতবর্ষের মুসলমানদের রাজনৈতিক আন্দোলন নিয়ে বলতে গেলে আমার তেমন কোন ধারণাই ছিলো না। এই বইয়ের আবার চৌম্বক অংশই ছিল কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সেই প্রথম রাজনৈতিক জীবনের গল্প। প্রচুর চরিত্র এই গল্পে, দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন সময়ের অগণিত সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে যত জনের কথাই সম্ভব হয়েছে তুলে দিয়েছেন৷ সেই বিবেচনায় এই বই আমি 'ভালো লাগিয়ে' পড়ব এমনটা আশা করিনি, কিন্তু শেষমেষ দেখা গেলো বহুদিন কোন থ্রিলার উপন্যাসও এমন একটানা পড়ে যাবার ইচ্ছা হয়নি৷ অকপট, প্রাঞ্জল ভাষা, প্রচুর সহায়ক তথ্য আর লেখকের নিজস্ব রসবোধ মিলিয়ে বইটা পড়ে বেশ আরাম পেলাম৷ একটা জিনিস বলতেই হয়, তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। বহু বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনাতেও অনেক খুঁটিনাটি বিষয় এমনভাবে উল্লেখ করেছেন যে পাঠকের মনে হতে পারে সে নিজেই ওই সময়ে গিয়ে সামনাসামনি সবকিছু প্রত্যক্ষ করছে। যতই পড়ি ততই পড়তে ইচ্ছা হয়।



(১৯৬৭ সালে কারাগারে বন্দি থাকাবস্থায় লেখা এই রচনায় ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ স্থান পেয়েছে।)
Profile Image for Afia Jahin Mow.
158 reviews43 followers
September 23, 2021
বই শুরু করার আগে এতো যে অাগ্রহ নিয়ে শেষ করব এটাও ভাবিনি, খটমটে বোরিং লেখনীর বদলে এমন সাবলীল, সুন্দর, ঝরঝরে লেখা পড়ব সেটাও ভাবিনি। বই যেই জায়গাতে শেষ হয়েছে, ফিকশন হলে মাথা খারাপ হয়ে যেত। এখন লেখকের বাকি দুটো বই পড়ে ফেলার জন্য আর তর সইছে না।
Profile Image for Wahida Akhtar.
37 reviews7 followers
April 10, 2020
বই - অসমাপ্ত আত্মজীবনী
লেখক - শেখ মুজিবুর রহমান
প্রকাশনী - ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড
প্রচ্ছদ মূল্য - ৫৫০৳
পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৩২৯
প্রথম প্রকাশ - ১৮ জুন ২০��২
ক্রমান্বয়ে ইংরেজি, উর্দু, জাপানি, চিনা, আরবি, ফরাসি, হিন্দি, তুর্কি, নেপালি, স্পেনীয়, অসমীয়া ও রুশ ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

শুরুটা ঠিক উপন্যাসের মত। গ্রামের শেখ বংশের একটি ছেলে বর্ণনা দিচ্ছে তার বংশের, তারপর মাত্র ১২ বছরে বাল্য বিবাহের কাহিনী বলে গেছেন অবলীলায়। লেখকের ভাষায় - "আমি শুনলাম আমার বিবাহ হয়েছে। তখন কিছুই বুঝতাম না, রেণুর বয়স বোধহয় তিন বছর হবে।"

এখানে মোটা দাগে, বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর, পরিবারের কথা, ছাত্রজীবনের আন্দোলন, পাকিস্তান-আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নানা চক্রান্ত, দুরভিসন্ধি ইত্যাদি বিষয় উঠে এসেছে। আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেসার কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন।

বইয়ে নিজ পরিবারের পরিচয়পর্ব থেকে শুরু করেছেন লেখক, তুলে ধরেছেন রাজনীতিতে নিজের হাতেখড়ির ঘটনা আর তার ক্রমবিকাশ।পিতা শেখ লুৎফর রহমানের সততা ও সচেতনতার বাণীকে মর্মে ধারণ করে পথচলা শুরু করেছিলেন তিনি। নিজের বাল্যকালেই পেয়েছেন স্বদেশী আন্দোলন, তারপর স্কুলজীবনেই পরিচিত হয়েছেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক আর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো নেতার সাথে।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু বলা যায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। নিজের লেখার মাধ্যমে তিনি যেন তাই ক্ষণে ক্ষণে প্রকাশ করে গেছেন। তবে সোহরাওয়ার্দীর অন্ধ অনুকরণ তিনি করেননি। অন্যায় মনে হলে সেটার প্রতিবাদ করেছেন; আবার সেটা যেনো বেয়াদবির পর্যায়ে চলে না যায়, সেদিকেও লক্ষ্য রেখেছেন।

পাকিস্তান আন্দোলনে নিজের এবং সোহরাওয়ার্দীর ভূমিকা বর্ণনা করেছেন স্পষ্টভাবে। সে সময়কার মুসলমানদের একমাত্র দাবি ছিল ‘পাকিস্তান’ নামে আলাদা রাষ্ট্র। আর সেই দাবী প্রতিষ্ঠায় নিজের ভূমিকা পালন করতে গিয়েই মূলত তিনি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন বাংলার রাজনীতি অঙ্গনের পরিচিত মুখ। আবার পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিম পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের কথাও তিনি বলেছেন।

সেসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে বার বার কারাবরণ করতে হয়েছে তাঁকে। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিলো যে নিজের জ্যেষ্ঠ পুত্র পর্যন্ত ছোট বেলায় পিতাকে চিনতো না। তবে এত কিছুর মধ্যেও পরিবার, স্ত্রী আর সন্তানদের প্রতি তার ভালোবাসা, গভীর অনুরাগ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।

জেলে থাকতে থাকতে লিখেছেন,
'জেলের মধ্যে জেল, তাকেই বলে সেল।' আবার প্রেসের কর্মচারীদের দেখে ভাবতেন, 'ওরা বড় জেলে, আর আমরা ছোট জেলে আছি। স্বাধীন দেশের মানুষের ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই, এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আরকি হতে পারে?'

বইটি পড়লে যে কেউই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিশক্তির প্রশংসা করতে বাধ্য হবে। হাতেগোনা দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের নাম, এমনকি কখনও কখনও সময় পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন। কারো সামান্যতম উপকারের কথা তিনি ভুলে যাননি।

যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে নিজের আসনে প্রচার-প্রচারণা চালাতে গিয়ে জনগণের ভালোবাসায় তিনি অভিভূত হয়েছেন বারবার। একটি ঘটনা সরাসরি তুলে দিচ্ছি -
"আমার মনে আছে খুবই গরিব এক বৃদ্ধ মহিলা কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে, শুনেছে এই পথে আমি যাব, আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বললো, " বাবা আমার এই কুঁড়েঘরে তোমায় একটু বসতে হবে।" আমি তার হাত ধরেই তার বাড়িতে যাই। অনেক লোক আমার সাথে, আমাকে মাটিতে একটা পাটি বিছিয়ে বসতে দিয়ে এক বাটি দুধ, একটা পান ও চার আনা পয়সা এনে আমার সামনে ধরে বলল, "খাও বাবা, আর পয়সা কয়টা তুমি নেও, আমার তো কিছুই নাই।" আমার চোখে পানি এল। আমি দুধ একটু মুখে নিয়ে, সেই পয়সার সাথে আরও কিছু টাকা তার হাতে দিয়ে বললাম, "তোমার দোয়া আমার জন্য যথেষ্ট, তোমার দোয়ার মূল্য টাকা দিয়ে শোধ করা যায় না।" টাকা সে নিল না, আমার মাথায় মুখে হাত দিয়ে বলল, "গরিবের দোয়া তোমার জন্য আছে বাবা।" নীরবে আমার চক্ষু দিয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়েছিল, যখন তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি। সেইদিনই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, 'মানুষেরে ধোঁকা আমি দিতে পারব না।' "

এত ভালোবাসার ভিড়েও বাঙ্গলিদের কিছু খাপছাড়া বিষয় তাকে হতাশ করতো। তাঁর সহজ স্বীকারোক্তির মধ্যে সে বিষয়ে আমরা ধারণা পাই, "আমাদের বাঙ্গালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল ‘আমরা মুসলমান, আর একটা হল, আমরা বাঙ্গালি।' পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে।" হয়তো মুজিব ১৯৭৫ সালে নিজের এ কথার মর্মার্থ বুঝেছিলেন আরো একবার।

পালিয়ে থাকার রাজনীতি তিনি পছন্দ করতেন না। কিন্তু কখনো কখনো দলের প্রয়োজনে এবং উর্ধতন নেতার নির্দেশে গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিতে হয়েছে তাকে। এ সংক্রান্ত কিছু মজাদার ঘটনার উল্লেখ আছে লেখনীতে, "সকল যাত্রী নেমে যাওয়ার পরে আমার পাঞ্জাবি খুলে বিছানার মধ্যে দিয়ে দিলাম। লুঙ্গি পরা ছিলাম, লুঙ্গিটা একটু উপরে উঠিয়ে বেঁধে নিলাম। বিছানাটা ঘাড়ে, আর সুটকেসটা হাতে নিয়ে নেমে পড়লাম। কুলিদের মত ছুটতে লাগলাম, জাহাজ ঘাটের দিকে। গোয়েন্দা বিভাগের লোক তো আছেই। চিনতে পারল না।" এ ধরনের আরও একটা মজার ঘটনা হচ্ছে, তাজউদ্দীনের হঠাৎ প্রেস রিপোর্টার বনে যাওয়া!
রাজনীতি-ইতিহাস আর হাজার হাজার মানুষের নাম-ধাম পড়তে পড়তে বিরক্ত হয়ে গেলে, এমন ঘটনা আপনাকে হাসতে বাধ্য করবে।
আর এগুলো কোনো নাটক-সিনামার কাহিনী না, একজন দেশপ্রেমিক নেতার জীবনের বাস্তব ইতিহাস।

লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।তিনি যেখানেই গিয়েছেন, খুঁজেছেন বাংলাকে, বাংলার সাথে মিল পেলেই করেছেন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা।

বাবা বলেছিলেন পড়াশুনা করতে; বাবা-মা দুজনই নিষেধ করেছিলেন, শেরে বাংলার বিরুদ্ধে কথা না বলতে, তাঁকে অসম্মান না করতে; মুজিব তাঁদের কথা শুনেছেন।
যখনই টাকার প্রয়োজন হয়েছে, নির্দ্বিধায় হাত পেতেছেন বাবা, মা, বোন কিংবা স্ত্রীর কাছে।
যতজন মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন, প্রত্যেকের নাম নিয়েছেন যথাযোগ্য সম্মানের সাথে।
"কোন নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন, তার প্রতিবাদ করা এবং তাকে বুঝিয়ে বলার অধিকার জনগনের আছে।" - একজন আদর্শ-নিরপেক্ষ নেতার মুখেই এ বচন শোভা পায়।

দেশের সব রাজনৈতিক দলের ছাত্রকর্মীদের জন্য অবশ্যপাঠ্য বলে বিবেচিত হতে পারে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। একজন আদর্শ ছাত্রনেতার কেমন হওয়া উচিত, তার দৃষ্টান্ত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক-কর্মী জীবনে আছে।

বইয়ের শেষে টীকা, (১৯৫৫-১৯৭৫) পর্যন্ত লেখকের রাজনৈতিক জীবন পরিচয়, লেখনীতে উল্লেখিত ব্যক্তিদের জীবনবৃত্তান্তমূলক টীকা এবং নির্ঘণ্টের সংযোজনী বইটিকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, টীকাগুলো বইয়ের শেষে না দিয়ে ফুটনোট আকারে লেখার সাথে দিয়ে দিলে পাঠকের পড়তে সুবিধা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিকার এক জায়গায় বলেছেন, ‘এ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত আত্মজীবনী লিখেছেন। ১৯৬৬-৬৯ সালে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি থাকাকালে একান্ত নিরিবিলি সময়ে তিনি লিখেছেন।’ বাকি জীবনের কাহিনী আর লিখে যেতে পারেননি তিনি। তাই পড়া শেষেও অতৃপ্তি থেকেই যায়! পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী মুজিব থেকে তিনি কিভাবে বাঙালির হয়ে উঠলেন, কিভাবে হয়ে উঠলেন' বঙ্গবন্ধু', সেই বর্ণনা তিনি দিয়ে যেতে পারেননি। পড়া শেষে বারবার এটাই মনে হচ্ছিলো যে, এই ঘটনাগুলোও যদি তাঁর লেখনীতে জানার উপায় থাকতো, কত ভালোই না হতো! আর বাঙালি পেতো বাংলাদেশের জন্মের বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস।

- ওয়াহিদা আখতার ছাননা
Profile Image for spring ~♡.
544 reviews751 followers
December 26, 2022
“Now when I think of him in jail, I remember what he had told me then. Even in 20 years, he never veered from what he said that day. Indeed, from that day, every day of my life I was blessed with his love. In all these years, no one could take me away from him and I didn’t let anyone deprive me of his love.” 


This one should be a must read. Even though I read it for my history assignment I'm so glad I did.
The only shortcoming of this book is it's well...unfinished. Would have loved to know the inside of Bangabandhu's mind during the 6 point movement and 70's election. But oh well. This one will stay in my heart for a long time nonetheless.
Profile Image for Arafat Prodhan.
11 reviews
August 27, 2020
লেখক না হয়েও অসাধারণ লিখছেন।। কোনো সময় বিরক্তি লাগে নাই।।সব কিছু একটু বেশিই বিস্তারিত লিখছেন।।সিনিয়র নেতাদের শ্রদ্ধা বাচক শব্দ গুলা অনেক ভা���ো লাগছে।। অসাধারণ নেতা ও কর্মী ছিলেন।।
Profile Image for Raihan Atahar.
118 reviews23 followers
March 16, 2020
'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) রচিত একটি আত্মস্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ। ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধুর লেখা চারটি খাতা তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছায়। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও কয়েকজন গুণীজনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় খাতাগুলো গ্রন্থাকারে পাঠকের নিকট পৌঁছে। মূল্যবান সেই খাতাগুলো বঙ্গবন্ধু তাঁর স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার প্রেরণায় ১৯৬৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে থাকা অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। অসমাপ্ত লেখাগুলোর জন্যই বইটির নাম দেয়া হয়েছে 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'। বঙ্গবন্ধুর জন্ম, বংশ পরিচয়, শৈশব, কৈশোর, শিক্ষাজীবন, রাজনৈতিক জীবন, তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা প্রভৃতি বিষয় স্থান পেয়েছে বইটিতে।

'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র প্রথম দিকে লেখক তাঁর জন্ম ও বংশ পরিচয় নিয়ে লিখেছেন। শেখ বোরহানউদ্দিন নামের একজন ধার্মিক পুরুষের মাধ্যমে কীভাবে শেখ বংশের গোড়াপত্তন হয়েছিল তা লেখক বইটিতে চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন। এরপর লেখক তাঁর শৈশব, শিক্ষাজীবন এবং ছাত্র থাকাকালীন অবস্থাতেই তিনি কীভাবে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তা বর্ণনা করেছেন।

মূলত রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই লেখকের জীবন আবর্তিত হয়��ছে। পাকিস্তান কায়েম, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা, দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন, মুসলীম লীগ-আওয়ামী লীগ দ্বন্দ্ব, লাহোর প্রস্তাব, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ, আঞ্চলিক বৈষম্য, বারবার জেলে যাওয়া, জেলে থাকাকালীন অবস্থায় লেখক কীভাবে অন্যান্য কয়েদিদের সাথে যোগাযোগ করতেন এবং জেলের বাইরের খবর পেতেন প্রভৃতি ঘটনা স্থান পেয়েছে বইটিতে। তৎকালীন বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি সম্পর্কে লেখকের ধারণা কেমন ছিল তাও বইটি পড়লে জানা যায়। বইটির শেষে বঙ্গবন্ধুর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও নির্ঘন্ট বইটিকে আরো তথ্যবহুল করেছে।

সবশেষে বলা যায়, 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বাঙালি জাতির জন্য এক অমূল্য দলিল। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় বইটি অনূদিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ ছাড়াও বহির্বিশ্বে পঠিত হচ্ছে। বইটি দল-মত নির্বিশেষে সকলের পড়া উচিত বলে মনে করি।
Profile Image for Srabon.
3 reviews8 followers
November 7, 2017
ইতিহাস পড়ার সময় কার কি হয় আমার জানা নেই। আমি আমার ব্যাপারটাই বলি। ছোট বেলায় যখনই ইতিহাসের বই খুলে বসতাম ঠিক তখনিই মনে হত কেউ যেন আমার মাথায় এক বিশাল পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছে। সম্ভবত পাহাড়টি রামায়নে বর্ণিত গন্ধমাদনই হবে, হনুমান লঙ্কা থেকে ফিরে আসার সময় ভুল করে আমার মাথায় ফেলে দিয়ে গেছে। থাক সে কথা। কথা হচ্ছিল ইতিহাস নিয়ে। আমার কাছে মনে হয় অধিকাংশ ইতিহাস বই লেখা হয় hieroglyphic এ। সে কারণেই ইতিহাস পঠনে এত মাথা ব্যাথা। কিন্তু ইতিহাস যদি কোন ব্যক্তির আত্মজীবনিতে ফুটে উঠে, তবে সেই বই আর দুর্বোধ্য থাকে না বলে আমি মনে করি। কারণ, চিন্তা করুন অন্ধকার একটি গলিতে আপনি কিছুতেই একা একা হাটতে পারবেন না, পথ হারিয়ে ফেলবেন। কিন্তু আপনার সাথে যদি একজন গাইড থাকে যে আপনাকে ধরে ধরে পথ চিনিয়ে নিয়ে যাবে। তখন বিষয়টা কেমন হবে? অবশ্যই আপনি সহজেই গন্তবে পৌছাতে পারবেন। একটি আত্মজীবনি ঠিক তেমনি, যেখানে লেখক আপনাকে তার সমকালীন জীবনে নিয়ে যাবেন, পরিচিত করে দেবেন তার অতীতের সাথে। তার চোখ দিয়ে ইতিহাস দেখবেন।

যে কারণে এত কথা বলা, শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী হয়ত অনেকে পড়েছেন এবং একটা জিনিস লক্ষ্যও করেছেন বইটিতে তিনি সহজ ভাষায় তার নিজের অতীতকে বর্ণনা করেছেন। আর তার অতীত বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই বাংলাদেশের ইতিহাস পঠনে শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনি একটি বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।
Profile Image for Muhi Uddin.
93 reviews4 followers
March 19, 2023
শেখ মুজিবের "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" শেষ করলাম। লম্বা সময় লেগেছে পড়তে। তবে বইটা পড়ে বোর হইনি। এতো সুন্দর করে লেখা যে এই লোককে রাজনীতিবিদ না বলে প্রোফেশনাল লেখক বললে বোধ হয় ভুল হবেনা।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, যেসব চেতনা লালন করে লোকটা আমৃত্যু লড়ে গেলেন। মানুষকে যেসব অশুভ থাবা থেকে রক্ষা করতে জীবনের পুরোটা সময় লড়েছিলেন, আজ তার নামে এসব অশুভ শক্তি প্রতিনিয়ত থাবা বসায় তার নাম নিয়ে। তার নাম জড়িয়ে সকল পাপকে হালাল করে নিয়েছে ওরা। এ মানুষটা বেঁচে থাকলে খুব যন্ত্রণায় ভুগতেন। নিশ্চয়ই এমন জরাগ্রস্ত দেশ ও জাতির জন্য তিনি তার জীবন দেননি।

আমার পরামর্শ থাকবে এক্সট্রিম লেভেলের সকল লিগাররা যেনো পড়ে। খুব দরকার পড়া।


শেখ মুজিব��র লেখা পড়ে তার প্রতি ভালোবাসা বেড়েছে। তবে তার অনেক বিষয়ে আমি সহমত হতে পারিনি। তার সাথে মতের অমিল নিয়েও তাকে ভালোবাসছি।


বিঃদ্রঃ আমি কোনভাবেই আওয়ামিলীগের ভক্ত নই। অঘোষিত কারণে শেখ সাহেবকে অপছন্দ করলেও তাঁকে পড়ে তাকে ভালোবাসছি।
Profile Image for Tanvir KLION.
43 reviews3 followers
January 5, 2015
রাজনীতি করতে ইচ্ছুক প্রতিটি মানুষের (যে কোন দলের) বইটি পাঠ্য বইয়ের মতো পড়া উচিৎ।
Profile Image for Faiyaz Rashid.
13 reviews6 followers
December 15, 2021
Sheikh Mujibur Rahman. Evident in his every step and the words he voiced, I may summon him as a 'Proud Bengal Nationalist'. Mujib, succumbing himself with the existential politics in the early times that resonated the whole India, had been a very great figure since then. With utter respect, he had also built himself as a disciple of Hussain Shaheed Suhrawardy. He was a sobered dreamer of an independent Pakistan - but alas, fate had turned out to be severing East from the West. In his lifetime, or to be precise, an uncompleted written book of words which we portray as his lifetime - he persevered for a picturesque he started to preserve during his myriad of adventures; a picturesque which constituted of independents - be it an 'independent' Pakistan or an independent Bengal. Time and again, he was seen to be struggling hard for the targeted goal of his life - 'Azaadi'. Azaadi, borne with six strong letters, was something he pursued and let others pursued for, fought and inspired others to fight for - that is, he won the hearts of many...
-
This book introduces you to a life led with full of emotional mixtures - love, happiness, grins, sorrows and more; an Autobiography which would eventually try to put its characters into live, just to let you see. Only what you need, is to co-operate.

Rating: 4.5
Profile Image for Hibatun Nur.
152 reviews
July 24, 2020
তিনি লেখক নন কিন্তু তার লেখা প্রমাণ করেছে যে, যখন কোন কিছু মন থেকে উৎসারিত হয় তখন তা অন্যদের মনকে অবশ্যই স্পর্শ করবে। তার জীবনীতে ফুটে উঠেছে এক স্বাধীনতাকামী ���েশপ্রেমিকের স্বাধীনতার স্বপ্ন এবং সে জন্য তার উদ্দ্যোগী মানসিকতা, ফুটে উঠেছে স্বাধীনতা অর্জনের পর ধীরে ধীরে স্বাধীন রাষ্ট্র নিয়ে দেখা স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার হতাশা এবং সেই স্বপ্ন অর্জনের জন্য তৎপরতা, ফুটে উঠেছে ধর্মনির্বিশেষে তার নিজ জাতির প্রতি ভালবাসা।
ফুটে উঠেছে সাধারণ জনগণের ধর্ম বিশ্বাসের দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় স্বার্থান্বেশী মানুষের নীচতা। ধর্মকে ব্যবহার করে ত��রা কিভাবে অন্যায় করেছে। কিভাবে ধর্মকে ব্যবহার অস্থিশীলতা তৈরি করেছে, কিভাবে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অন্য অন্যায় থেকে মানুষের দৃষ্টি সরানোর চেষ্টা করেছে।
বই পড়ে খারাপ লেগেছে শুধু একটা ব্যাপারে যে, ঘটনাপ্রবাহ কেবল ১৯৫৪ সাল পর্যন্তই উঠে এসেছে। পুরো সময়ের সম্প্রসারিত জীবনী না পাওয়ার হতাশা বহুদিন থেকে যাবে।
Profile Image for Rifat Abser.
5 reviews
July 3, 2021
টুংগিপাড়ার "শেখ মুজিব" কিভাবে "বাংগালি জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান" হয়ে উঠলেন সে গল্প জানতে চাইলে তার লিখিত "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" বইটি পড়ার কোন বিকল্প নেই। বংগবন্ধুকে স্বচক্ষে দেখতে পারিনি, তার ভাষণের ভিডিও-অডিও ক্লিপ হয়ত দেখেছি কিংবা শুনেছি কিন্তু তার সাথে সরাসরি আলাপচারিতার(যদিও একপাক্ষিক) সুযোগ হয়েছে বইটি পড়ে। এই অভিজ্ঞতার কোন তুলনা নেই। অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় তিনি ততকালীন ভারতীয় উপমহাদেশীয় রাজনীতির স্বরূপ তুলে ধরেছেন সুন্দরভাবে। বইটি পড়ার সময় এক মুহূর্তের জন্যও বিরক্ত লাগেনি।তাই আমার মত ইতিহাসপিপাসু পাঠকদের রোমাঞ্চিত হওয়ার জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার বই।
Profile Image for Utsob Roy.
Author 2 books76 followers
January 26, 2022
আমার ক্ষীণ সন্দেহ আছে অথেনটিসিটি নিয়ে। তবে সেটা ক্ষীণ কেননা যদিও ক্ষমতাসীনেরা ইতিহাস পুণর্লিখন করে থাকে কিন্তু মুজিবের যে সময়কাল এই আত্মজীবনীতে এসেছে তাতে আসলে সম্পাদনার বিশেষ প্রয়োজন নাই।

একটা জিনিস বোঝা গেলো তা হচ্ছে মুজিবের মত ত্যাগী ও সংগ্রামী কর্মী ও নেতা তাঁর সময়ে বেশকিছু থাকলেও এখন ডানপন্থায় পাওয়া অসম্ভব।

রাষ্ট্রপ্রধান মুজিব বরং আরো কম্প্লিকেটেড বিষয়। যে লঙ্কায় যায় সেই-ই কি রাবণ হয়? নাকি যথেষ্ট রাবণ না হতে পারলে লঙ্কা হারাতে হয়? সেই ইতিহাস বস্তুনিষ্ঠতার সাথে কে লিখেছে কে জানে!
Displaying 1 - 30 of 140 reviews

Join the discussion

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.
pFad - Phonifier reborn

Pfad - The Proxy pFad of © 2024 Garber Painting. All rights reserved.

Note: This service is not intended for secure transactions such as banking, social media, email, or purchasing. Use at your own risk. We assume no liability whatsoever for broken pages.


Alternative Proxies:

Alternative Proxy

pFad Proxy

pFad v3 Proxy

pFad v4 Proxy