বিষয়বস্তুতে চলুন

অনাক্রম্যতন্ত্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্রতিরোধে লসিকানালী ব্যবস্থার সাড়া
প্রতিরোধ ব্যবস্থার কোষ

অনাক্রম্যতন্ত্র বা প্রতিরক্ষাতন্ত্র বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইংরেজি: Immune system) হলো বিভিন্ন জৈবিক কাঠামো সহযোগে গঠিত জীবদেহের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা জীবদেহকে আক্রমণকারী রোগব্যধির বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।[] সঠিকভাবে কাজ করতে অনাক্রম্যতন্ত্রকে বহিরাগত ভাইরাস বা পরজীবীর বিভিন্ন এজেন্ট (যাদেরকে রোগ সংক্রামক জীবাণু বা ইংরেজিতে প্যাথোজেন নামে ডাকা হয়) জীবদেহের নিজস্ব পরজীবী থেকে আলাদা করে শনাক্ত করতে হয়। অনেক প্রজাতিতেই অনাক্রম্যতন্ত্রকে অন্তঃঅনাক্রম্যতন্ত্র, অর্জিত অনাক্রম্যতন্ত্র বা হরমোনজনিত অনাক্রম্যতন্ত্র ইত্যাদি উপভাগে ভাগ করা হয়। মানুষের ক্ষেত্রে রক্ত-মস্তিষ্ক প্রতিবন্ধক, রক্ত সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড প্রতিবন্ধক এবং এ ধরনের ফ্লুইড-মস্তিষ্ক-প্রতিবন্ধক, কেন্দ্রীয় এবং প্রান্তীয় অনাক্রম্যতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়।

রোগ সংক্রামক জীবাণুগুলি খুব দ্রুত বৃদ্ধি বা বংশবিস্তার লাভ করে অনাক্রম্যতন্ত্রকে ফাঁকি দিতে পারে, আবার অনেক প্রতিরক্ষা উপাদানও একইভাবে উন্নতি করে রোগ সংক্রামক জীবাণুকে শনাক্ত ও প্রশমিত করতে পারে। সাধারণ এককোষী যেমন ব্যাক্টেরিয়াতে ব্যাক্টেরিওফাজের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী এনজাইরূপে অপরিণত অনাক্রম্যতন্ত্র থাকে। আদিকোষীতে অন্য়ান্য় সাধারণ অনাক্রম্যতন্ত্র গড়ে উঠেছে এবং তাদের বর্তমান বংশধরে যেমন উদ্ভিদ ও অন্তঃভার্টিব্রাটাশে এখনও এটি বিদ্যমান। অনাক্রম্যতন্ত্রের কার্যপ্রণালীর মধ্যে রয়েছে ফ্যাগোসাইটোসিস, ডিফেনসিন্স নামধারী ক্ষুদ্রাণুরোধী পেপটাইডসমূহ এবং কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম। মানুষসহ ন্যাথস্টোমাটা অধিশ্ৰেণীয় মেরুদণ্ডী দের নির্দিষ্ট রোগ সংক্রামক জীবাণূগুলির বিরুদ্ধে আরো সুচারুরূপে পদক্ষেপ নেবার মতো অধিক উন্নত অনাক্রম্যতন্ত্র রয়েছে। সহজাত বা অর্জিত অনাক্রম্যতা অনাক্রম্য স্মৃতি তৈরী করে রেখে একবার প্রতিরোধ করা হয়েছে এমন রোগ সংক্রামক জীবাণুর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া গড়ে তোলে। টিকা প্রক্রিয়ার ভিত্তিই হল অর্জিত অনাক্রম্যতা।

অনাক্রম্যতন্ত্রে কোনো সমস্যা হলে স্বয়ং-অনাক্রম্য ব্যধি (অটোইমিউন ডিজিজ), প্রদাহী ক্ষত বা কর্কটরোগ (ক্যান্সার) হতে পারে।^[২] অনাক্রম্যতন্ত্র তুলনামূলক ভাবে দুর্বল থাকলে অনাক্রম্যহীনতা (ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি) এবং তা থেকে প্রাণঘাতী সংক্রমণ হতে পারে। মানুষের ক্ষেত্রে জিনগত রোগের (যেমন গুরুতর যৌগিক অনাক্রম্যহীনতা সিভিয়ার কম্বাইন্ড ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি) কারণেও হতে পারে, আবার বাইরে থেকে জীবাণু অর্জন করার কারণেও (যেমন এইচ আই ভি/ এইডস) হতে পারে বা অনাক্রম্যতন্ত্রকে দুর্বল করে এমন ওষুধ ব্যবহারের কারণেও হতে পারে। অন্যদিকে, অনাক্রম্যতন্ত্র নিজ দেহ কোষকে ঠিকভাবে শনাক্ত না করে তাকে বহিরাগত কোষ মনে করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াকে স্বয়ং-অনাক্রম্যতা (অটোইম্যুনিটি) বলা হয়। এরকম কিছু স্বয়ং-অনাক্রম্য সমস্যা হলো হাশিমোটোস থাইরয়ডিটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস টাইপ-১ এবং সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমাটোসাস। ইমিউনোলজি বা অনাক্রম্যবিজ্ঞানে অনাক্রম্যতন্ত্রের বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

স্তরভিত্তিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

[সম্পাদনা]

স্তরভিত্তিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে ইম্যুনোসিস্টেম শরীরকে জীবাণুমুক্ত রাখতে সচেষ্ট হয়।শারীরিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যাকটেরিয়াভাইরাসের মত জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।যদি এই জীবাণুসমূহ শারীরিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা নিষ্ক্রিয় না হয়,তবে সহজাত অনতিক্রম্যতা এর কাজ শুরু করে,যদিও এই ধরনের প্রতিরোধ অনির্দিষ্ট ধরনের।তাতেও জীবাণু নিষ্ক্রিয় না হলে দ্বিতীয় একধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যাকে অভিযোজিত অনাক্রম্যতা নামে অভিহিত করা হয় এবং যা মেরুদন্ডী প্রানির দেহে বিদ্যমান, তা সক্রিয় হয়।এই ধরনের প্রতিরোধ জীবাণু শরীরে প্রবেশের পরই তৈরি হয় এবং ক্রমশ এর কার্যকরীতা বাড়তে থাকে এবং জীবাণু ধ্বংসের পরও এর স্মৃতি শরীরে থেকে যায় এবং পুনরায় একই জীবাণুর আক্রমণে অভিযোজিত অনাক্রম্যতা একে চিনতে পেরে সক্রিয় হয়।


পার্থক্য -

অভিযোজিত অনাক্রম্যতা-জীবাণুনির্দিষ্ট,জীবাণু প্রবেশের কিছুসময় পর কার্যকর হয়,সেলুলার বা কোষমধ্যস্তথা ও হিউমোরাল অনাক্রম্যতা দুটিই এর উপাদান,স্মৃতিরক্ষক এবং মেরুদন্ডীদের অন্যতম অন্যক্রম্যতা।

সহজাত অনাক্রম্যতা-অনির্দিষ্টতা, তাৎক্ষনিকতা কিন্তু স্মৃতিহীনতা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সকল ধরনের প্রাণিতে উপস্থিত এবং এতেও সেলুলার ও হিউমোরাল অনাক্রম্যতা উপস্থিত।

দুইধরনেরই নিজস্ব ও বাহ্যিক পার্থক্য নির্ণয়ের ক্ষমতা আছে।বাহ্যিক এর মধ্যে এন্টিজেন এর বিপরীতে এন্টিবডি তৈরি হয় এবং ইম্যুন রেস্পন্স শুরু

পৃষ্ঠবাধা-

বিভিন্ন যান্ত্রিক, রাসায়নিক, জৈবিক বাধা এর অন্তর্ভুক্ত। পাতার মোমের কিউটিকল,পোকামাকড়ের বহিঃপত্বক,ডিমের বহিরাবরণ এবং ত্বক মেকানিকাল তথা যান্ত্রিক বাধা হিসেবে কাজ করে।এরপর ফুসফুস যেমন হাঁচি-কাশির, মিউকাসের মাধ্যমে, চোখের পানি, মূত্র দ্বারা জীবাণু নির্গত করে।

রাসায়নিক বাধার মধ্যে ত্বক এবং শ্বসনতন্ত্র বিটা ডিফেন্সিন নামক এনজাইম,মাতৃদুগ্ধ,লালা,অশ্রুনির্গত লাইসোজাইম, ফসফোলাইপেজ এ টু ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারক হিসেবে কাজ করে। মহিলাদের যোনিপথের অম্লধর্মী পরিবেশ এবং পুরুষের সিমেনের ডিফেন্সিন এবং জিংক জীবানু ধ্বংসে রাসায়নিক অনাক্রম হিসেবে কাজ করে।

তাছাড়া কিছু বিভিন্ন প্রত্যংগের নিজস্ব কিছু অনুজীব থাকে,যারা পরিবেশে পিএইচ,আয়রন কমিয়ে ক্ষতিকর জীবানুর আক্রমণ প্রতিহত করে।এরাই জৈবিক অনাক্রম হিসেবে কাজ করে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Your Immune System: What You Need To Know"Cleveland Clinic (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-০৫ 
pFad - Phonifier reborn

Pfad - The Proxy pFad of © 2024 Garber Painting. All rights reserved.

Note: This service is not intended for secure transactions such as banking, social media, email, or purchasing. Use at your own risk. We assume no liability whatsoever for broken pages.


Alternative Proxies:

Alternative Proxy

pFad Proxy

pFad v3 Proxy

pFad v4 Proxy