উপাদান
উপাদান বলতে কোনও ভৌত বস্তুকে গঠনকারী পদার্থ বা পদার্থের মিশ্রণকে বোঝায়। উপাদানগুলি বিশুদ্ধ বা অবিশুদ্ধ হতে পারে, জৈব কিংবা অজৈব হতে পারে। উপাদানগুলিকে এদের ভৌত ধর্ম, রাসায়নিক ধর্ম, ভূতাত্ত্বিক উৎস কিংবা জৈব ক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হতে পারে। যে শাস্ত্রে উপাদানসমূহ ও তাদের প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে উপাদান বিজ্ঞান বলে।
কাঁচামাল বা অপরিপক্ক উপাদানগুলিকে বিভিন্ন উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে এগুলির বিশোধন, ধর্ম পরিবর্তন, আকৃতি প্রদান বা এগুলির ভেতরে অন্য উপাদান অনুপ্রবিষ্টকরণের মতো কাজ সম্পন্ন করা হতে পারে। কাঁচামাল থেকে রাসায়নিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে নতুন কৃত্রিম উপাদান উৎপাদন করা হতে পারে।
শিল্পখাতে শিল্পোৎপাদন প্রক্রিয়াতে আগম (ইনপুট) হিসেবে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয় এবং এগুলি থেকে দ্রব্য বা জটিলতর উপাদান উৎপাদন করা হয়।
ব্যবহার অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ
[সম্পাদনা]উপাদানসমূহকে এগুলির ব্যবহারের ভিত্তিতে মোটা দাগে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। যেমন:
- নির্মাণ উপাদানসামগ্রী, যেগুলি নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়
- অন্তরক নির্মাণ উপাদানসামগ্রী, যেগুলি ভবন বা নির্মিত কাঠামোর অভ্যন্তরে তাপ ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- দুর্গল উপাদানসামগ্রী (Refractory materials), যেগুলি উচ্চ তাপমাত্রার কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়।
- পারমাণবিক উপাদানসামগ্রী (Nuclear materials) যেগুলি পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন ও পারমাণবিক অস্ত্রসমূহে ব্যবহৃত হয়।
- বায়ব-মহাকাশ উপাদানসামগ্রী, যেগুলি বিমান ও অন্যান্য বায়ব-মহাকাশমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়।
- জৈব-উপাদানসামগ্রী (Biomaterial), যেগুলি জৈব সংশ্রয় বা ব্যবস্থার সাথে আন্তঃক্রিয়া সম্পাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
কোনও প্রদত্ত প্রয়োগের জন্য কোন্ উপাদান ব্যবহার করতে হবে, তা নির্বাচন করার প্রক্রিয়াকে উপাদান নির্বাচন (Material selection) বলে।
গঠনকাঠামো অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ
[সম্পাদনা]উপাদানসমূহের প্রাসঙ্গিক কাঠামো উপাদানের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন মাপের হতে পার। উপাদানের কাঠামো ও গঠন অণুবীক্ষণ বা বর্ণালীবীক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব।
অণুকাঠামো
[সম্পাদনা]প্রকৌশলক্ষেত্রে উপাদানগুলিকে এগুলির আণুবীক্ষণিক কাঠামোর উপরে ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়।:[১]:১৫–১৭
- দগ্ধমৃত্তিকা (Ceramic): অধাতব, অজৈব কঠিন পদার্থ
- কাচ: অনিয়তাকার কঠিন পদার্থ
- ধাতু: বিশুদ্ধ বা সংকর মৌলিক পদার্থ যেগুলি ধাতব বন্ধনের কারণে বিশেষ রাসায়নিক আচরণ প্রদর্শন করে।
- বহুলক (Polymers): দীর্ঘ কার্বন বা সিলিকন শৃঙ্খলভিত্তিক উপাদান
- সংকর উপাদান (Hybrids): একাধিক ধরনের উপাদানের সমবায়, যেমন সংযুত উপাদান (composite materials)
বৃহত্তর মাপনীর কাঠামো
[সম্পাদনা]সফেন উপাদান (foams) ও বয়নকৃত উপাদানগুলির (textiles) ক্ষেত্রে রাসায়নিক কাঠামোর চেয়ে বৃহত্তর মাপনীতে অব্যবহিত পর্যবেক্ষণযোগ্য ধর্মাবলি বেশি গুরত্বপূর্ণ হয়ে থাকে। যেম সফেন উপাদানগুলির মধ্যবর্তী ছিদ্র, বা বয়নকৃত উপাদানের বুনটের বিন্যাস।
ধর্ম অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ
[সম্পাদনা]উপাদানগুলিকে এগুলির বৃহৎ-মাপনীর ভৌত ধর্মাবলি দ্বারা তুলনা ও শ্রেণীবদ্ধ করা যায়।
যান্ত্রিক ধর্ম
[সম্পাদনা]যান্ত্রিক ধর্মগুলি প্রযুক্ত বলের বিপরীত কোনও উপাদান কীভাবে সাড়া দেবে, তা নির্ধারণ করে। যেমন:
- অনমনীয়তা (Stiffness)
- সহতামাত্রা (Strength)
- দৃঢ়তা (Toughness)
- কাঠিন্য (Hardness)
তাপীয় ধর্ম
[সম্পাদনা]ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রায় উপাদানসমূহ গুণ হারাতে পারে বা এগুলির ধর্মের পরিবর্তন ঘটতে পারে। তাপীয় ধর্মের মধ্যে আছে তাপীয় পরিবাহিতা এবং তাপ ধারকত্ব, যা উপাদানটি দ্বারা তাপের সঞ্চালন ও সংরক্ষণের ব্যাপারগুলির সাথে জড়িত।
অন্যান্য ধর্ম
[সম্পাদনা]বিভিন্ন শর্তে উপাদানগুলির যেকোন পরিমাপযোগ্য আচরণের নিরিখে এগুলিকে তুলনা ও শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। উল্লেখযোগ্য অন্যান্য ধর্মের মধ্যে আছে আলোকীয়, বৈদ্যুতিক ও চুম্বকীয় আচরণের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য।[১]:৫–৭
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Ashby, Michael; Shercliff, Hugh; Cebon, David (২০১০)। Materials engineering, science, processing and design (2nd সংস্করণ)। Oxford: Elsevier। আইএসবিএন 9781856178952।