খাদ্য অপচয়
খাদ্য অপচয়, খাদ্য বর্জ্য বা খাদ্য নষ্টকরণ বলতে অভুক্ত খাদ্যকে বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়ার ঘটনাটিকে বোঝানো হয়। খাদ্য ব্যবস্থার সর্বত্র যেমন খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য বিতরণ, খাদ্য খুচরা বিক্রয় এবং খাদ্য ভোগ, ইত্যাদি বিভিন্ন স্তরে বহু বিভিন্নভাবে খাদ্যের অপচয় ঘটে। বিশ্ব পর্যায়ে উৎপাদিত খাদ্যের[২] এক-তৃতীয়াংশ[৩] থেকে অর্ধেক[৪] পরিমাণ অপচয় বা নষ্ট হয়। নিম্ন-আয়ের দেশগুলিতে বেশিরভাগ অপচয় উৎপাদন পর্যায়ে ঘটে। অন্যদিকে উন্নত দেশগুলিতে ভোক্তা পর্যায়ে, প্রতি বছর জনপ্রতি প্রায় ১০০ কিলোগ্রাম হারে খাদ্যের অপচয় ঘটে।[৫]
খাদ্যের অপচয় জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষির নেতিবাচক প্রভাবের অন্যতম উপাদান। এছাড়া এটিকে পরিবেশগত আরও বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টির জন্য দায়ী করা হয়। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ২০১৪ সালে হিসাব করে যে খাদ্যের অপচয়ের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ২.৬ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক ক্ষতির সৃষ্টি হয় এবং এটি বিশ্বে শতকার ৮ ভাগ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী।[৬] অধিকন্তু, যেসব অপচয়কৃত বা নষ্ট খাদ্য পুনরুদ্ধার করে অন্য কাজে লাগানো হয় না (যেমন কম্পোস্ট সার), সেগুলি পরিবেশের উপর বহুসংখ্যক নেতিবাচক পরিণামের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উদাহরণস্বরূপ জৈব বর্জ্যের জীবাণু কর্তৃক অবাত হজমের ফলে যেসব আবর্জনাভূমি গ্যাস উৎপন্ন হয়, সেগুলি মিথেন নামক গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রধান একটি উৎস। খাদ্য বর্জ্যে যে ফসফরাস থাকে, সেগুলি পুনরুদ্ধার না করার ফলে ফসফেট খনন বৃদ্ধি পায়। এছাড়া খাদ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্তরে খাদ্য অপচয় হ্রাস করলে এগুলিতে পানি, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদের ব্যবহার হ্রাস পাবে, ফলে পরিবেশের উপরে কৃষির নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস পাবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় খাদ্যের অপচয় হ্রাসকে একটি টেকসই অর্থনীতি গড়ে তোলার অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যগুলির মধ্যে "বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু খাদ্য অপচয় অর্ধেক" করার লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[৭] অধিকন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন উপশমকরণ কৌশলগুলির মধ্যে খাদ্য অপচয় হ্রাস অন্যতম একটি কৌশল হিসেবে স্বীকৃত, যার ফলে খাদ্যব্যবস্থার কার্বন তীব্রতা (Carbon intensity) অপেক্ষাকৃত অধিকতর দক্ষভাবে হ্রাস করা সম্ভব।[৬]
বিশ্বে খাদ্য অপচয়
[সম্পাদনা]জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচির (ইউএনইপি) ওয়েবসাইটে জাতিসংঘের ‘খাবার অপচয় সূচক প্রতিবেদন ২০২৪’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন ২০২৪ সালের মার্চ মাসে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে ২০২২ সালে মোট খাদ্য অপচয় হয়েছে ১০০ কোটি টনের বেশি, যা বিশ্ববাজারে আসা মোট খাদ্যের পাঁচ ভাগের এক ভাগ।
- বাংলাদেশে বাসাবাড়িতে একজন ব্যক্তি গড়ে বছরে ৮২ কেজি খাবার অপচয় করেন, যা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও ভারতের চেয়ে বেশি।
- বিশ্বে বাসাবাড়িতে একজন ব্যক্তি বছরে গড়ে সবচেয়ে বেশি খাবার অপচয় করে মালদ্বীপে—২০৭ কেজি।
- সবচেয়ে কম খাবার নষ্ট হয় মঙ্গোলিয়ায়—১৮ কেজি।
- পাকিস্তানে—১৩০ কেজি
- নেপাল—৯৩ কেজি
- মিয়ানমার ৭৮ কেজি
- শ্রীলঙ্কা ৭৬ কেজি
- ভারত ৫৫ কেজি
- ভুটান ১৯ কেজি
- যুক্তরাষ্ট্রে একজন ব্যক্তি বাসাবাড়িতে গড়ে বছরে খাবার অপচয় করেন ৭৩ কেজি।
- যুক্তরাজ্যে ৭৬ কেজি
- চীনে ৭৬ কেজি
- রাশিয়ায় ৩৩ কেজি
- প্রতিবেদন মোতাবেক, ২০২২ সালে অপচয় হওয়া খাবারের ৬০ শতাংশই বাসাবাড়ির। এর পরিমাণ ৬৩ কোটি ১০ লাখ টন। ২৮ শতাংশ অপচয় হয়েছে রেস্তোরাঁ, ক্যানটিন ও হোটেলের মতো খাদ্য পরিষেবায়। কসাই ও মুদিদোকানে অপচয় হয়েছে ১২ শতাংশ খাবার।[৮]
খাদ্য অপচয়ের কারণ
[সম্পাদনা]- প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্ডার দেয়া এবং সব খাবার একটু চেখে দেখার প্রবণতা রেস্তোরা গুলোতে খাবার অপচয়ের একটি কারণ।
- বাসা ও রেস্তোরাঁয় খাবার অপচয়ের আরেকটি কারণ হলো- দরকারের চেয়ে বেশি রান্না করা, অতিরিক্ত খাবার কিনে তা ব্যবহার না করা এবং খাবার সংরক্ষণ যথাযথভাবে না করা।[৯]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "The Food Waste Fiasco: You Have to See it to Believe it"। Rob Greenfield (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-১০-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২২।
- ↑ Foundation, Outrider (২০১৯-০৯-১৬)। "Opinion | Food Waste is the World's Dumbest Environmental Problem"। The Rising — Covering how changes in the environment impact business, technology, and politics. (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০১-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৬।
- ↑ "Global Food Loss and Food Waste"। UN Food and Agricultural Organisation। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৬-০৯।
- ↑ "Food Waste: Half Of All Food Ends Up Thrown Away"। Huffington Post। ১০ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-০৫।
- ↑ Gustavson, Jenny; Cederberg, Christel; Sonesson, Ulf; van Otterdijk, Robert; Meybeck, Alexandre (২০১১)। Global Food Losses and Food Waste (পিডিএফ)। FAO।
- ↑ ক খ "Reduced Food Waste"। Project Drawdown (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০২-১২। ২০২০-০৯-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১৯।
- ↑ United Nations (2017) Resolution adopted by the General Assembly on 6 July 2017, Work of the Statistical Commission pertaining to the 2030 Agenda for Sustainable Development (A/RES/71/313)
- ↑ বাংলাদেশে মাথাপিছু খাবার অপচয় যুক্তরাষ্ট্র–যুক্তরাজ্যের চেয়ে বেশি, প্রথম আলো, ২৯ মার্চ ২০২৪
- ↑ ব্রিটেন-আমেরিকার চেয়ে বাংলাদেশে কেন বেশি খাবার নষ্ট হয়?, বিবিসি নিউজ বাংলা, ৩০ মার্চ ২০২৪
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- Porpino, Gustavo (২০১৬)। "Household Food Waste Behavior: Avenues for Future Research"। Journal of the Association for Consumer Research। 1 (1): 41–51। এসটুসিআইডি 56005307। ডিওআই:10.1086/684528।
- Baylen J. Linnekin (২০১৬)। Biting the Hands that Feed Us: How Fewer, Smarter Laws Would Make Our Food System More Sustainable। Island Press। আইএসবিএন 978-1610916752।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- NRDC page on food waste (advocacy site with suggestions)
- Reduced Food Waste - Solution Summary Project Drawdown, 2020.
- Food Waste and Rescue Report in Israel
- low down food waste[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Beatrice Garske, Katharine Heyl, Felix Ekardt et al.: Challenges of Food Waste Governance, Land 2020.