দ্য লর্ড অব দ্য রিংস
লেখক | জে. আর. আর. টলকিন |
---|---|
দেশ | যুক্তরাজ্য |
ভাষা | ইংরেজি |
ধরন | হাই ফ্যান্টাসি, অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস, বীররসাত্মক রোম্যান্স, অ্যাকশন অ্যাডভেঞ্চার |
প্রকাশক | জিও. অ্যালেন অ্যান্ড আনউইন |
প্রকাশনার তারিখ | ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ |
মিডিয়া ধরন | মুদ্রণ (হার্ডব্যাক ও পেপারব্যাক) |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ১২১৬ পৃষ্ঠা (সামগ্রিক) |
পূর্ববর্তী বই | দ্য হবিট |
- অন্যান্য ব্যবহারের জন্য দেখুন: দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস (দ্ব্যর্থতা নিরসন)
দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস (ইংরেজি ভাষায়: The Lord of the Rings) ইংরেজ ভাষাবিজ্ঞানী জে. আর. আর. টলকিন রচিত একটি মহাকাব্যিক হাই ফ্যান্টাসি উপন্যাস। টলকিনের পূর্ববর্তী, অপেক্ষাকৃত কম জটিল ছোটোদের ফ্যান্টাসি উপন্যাস দ্য হবিট-এর (১৯৩৭) পরিপূরক উপন্যাস (সিকোয়েল) রূপে এই গল্পের সূত্রপাত হলেও, ধীরে ধীরে এটি একটি বৃহত্তর রচনার আকারে বিকশিত হয়ে ওঠে। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৯ সালের মধ্যবর্তী সময়ে, মুখ্যত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ধাপে ধাপে এই উপন্যাসটি রচনা করা হয়।[১] টলকিন প্রথমে একটি খণ্ডে উপন্যাসটি সমাপ্ত করতে চাইলেও, এটি প্রথমে তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়। যুদ্ধোত্তর বাজারে কাগজের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে ১৯৫৪-৫৫ সালের আগে উপন্যাসটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে একাধিকবার এই উপন্যাস পুনর্মুদ্রিত হয় এবং একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়।[২] এই কারণে এই উপন্যাসকে বিংশ শতাব্দীর সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী রচনা বলে মনে করা হয়।
উপন্যাসের শিরোনাম কাহিনির প্রধান খলনায়ক ডার্ক লর্ড (কালো জাদুকর) সাউরনের পরিচায়ক। তিনি এক পূর্ববর্তী যুগে একটি ওয়ান রিং (এক অঙ্গুরীয়) সৃষ্টি করেন অন্যান্য রিংস অফ পাওয়ার (শক্তি অঙ্গুরীয়)-গুলির উপর আধিপত্য কায়েম করার ইচ্ছায়। এই ওয়ান রিং-ই ছিল মিডল-আর্থ (মধ্য-পৃথিবী) দখলের অভিযানে তাঁর চরম অস্ত্র। কাহিনির সূত্রপাত শায়ার নামে পরিচিত হবিটদের দেশে। এই শায়ার খানিকটা ইংল্যান্ডের গ্রামাঞ্চলের মতো। পরে মিডল-আর্থের বিভিন্ন অঞ্চল পরিভ্রমণকারী এই কাহিনির মূল চরিত্রগুলি, বিশেষত হবিট চরিত্রগুলির, চোখ দিয়ে কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। এই চরিত্রগুলি হল ফ্রোডো ব্যাগিনস, স্যামওয়াইজ গ্যামজি (স্যাম), মেরিয়াডক ব্র্যান্ডিবাক (মেরি) ও পেরেগ্রিন টুক (পিপিন)। মিডল-আর্থ নামক এই কাল্পনিক পৃথিবীর বাসিন্দারা হল মানুষ ও অন্যান্য মনুষ্যপ্রতিম জাতি (হবিট, এলফ, ডুয়ার্ফ ও অর্ক)। এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু বাস্তব ও কাল্পনিক জীবের উল্লেখ (যেমন, এন্ট, ওয়ার্গ, বালরগ, ট্রল ইত্যাদি)। এছাড়াও রয়েছে মানুষের চেয়েও উচ্চ প্রজাতির ফেরেস্তা সদৃশ ভালার ও মায়ার যাদেরকে মানুষরা যথাক্রমে ঈশ্বর ও জাদুকর হিসেবে জানে। তবে এই কাল্পনিক পৃথিবীতে স্রষ্টা বা ঈশ্বর একজন, যাকে এরু ইলুভাটার নামে ডাকা হয়।
টলকিনের অন্যান্য রচনার সঙ্গে সঙ্গে লর্ড অফ দ্য রিংস-ও উৎস ও বিষয়বস্তুর বিস্তারিত বিশ্লেষণের বিষয়। এটি একটি প্রধান রচনা হলেও ১৯১৭ সাল থেকে চলে আসা টলকিনের একটি বিশাল কর্মকাণ্ডের শেষ পর্যায়। এই কর্মকাণ্ডের নাম টলকিন রেখেছিলেন মিথোপোয়িয়া।[৩] লর্ড অফ দ্য রিংস-এর কাহিনি এবং এর পূর্ববর্তী উপন্যাসটির উপর প্রভাব বিস্তার করেছে ভাষাবিজ্ঞান, পুরাণকথা, ধর্ম ও শিল্পায়ণের প্রভাবের প্রতি লেখকের বিতৃষ্ণা। এছাড়াও পূর্বতন ফ্যান্টাসি সাহিত্য ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে টলকিনের অভিজ্ঞতার প্রভাবও এই উপন্যাসে দেখা যায়।[৪] আধুনিক ফ্যান্টাসি সাহিত্যেও টলকিনের প্রভাব অপরিসীম। এই প্রভাবের গুরুত্ব এতটাই যে "টলকিনিয়ান" ও "টলকিনেস্ক" শব্দদুটির প্রয়োগ "অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি"-তে অনুমোদিত হয়েছে।[৫]
লর্ড অফ দ্য রিংস-এর দীর্ঘস্থায়ী জনপ্রিয়তার কারণে জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে এই রচনার উল্লেখ করা হতে থাকে। টলকিনের রচনার ভক্তেরা একাধিক ক্লাব স্থাপন করেন।[৬] টলকিন ও তাঁর রচনা সম্পর্কিত একাধিক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়। লর্ড অফ দ্য রিংস অনুপ্রাণিত করে চিত্রকলা, সংগীত, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন, ভিডিওগেম ও পরবর্তী সাহিত্যধারাকে। লর্ড অফ দ্য রিংস নাট্যায়িত হয় বেতার, মঞ্চ ও চলচ্চিত্রে।
সারাংশ
[সম্পাদনা]লর্ড অফ দ্য রিংস উপন্যাসটি প্রকৃতপক্ষে তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়। এই তিনটি খণ্ডের শিরোণাম হল: দ্য ফেলোশিপ অফ দ্য রিংস, দ্য টু টাওয়ার্স ও দ্য রিটার্ন অফ দ্য কিং।
দ্য ফেলোশিপ অফ দ্য রিং
[সম্পাদনা]মর্ডরে ডার্ক লর্ড সাউরন একটি "শাসনকারী শক্তি অঙ্গুরীয়" তৈরি করেন। ইসিলডুর যুদ্ধে সেটি কেটে নেন এবং নিজের কাছে রেখে দেন। পরে তিনি অর্কদের হাতে নিহত হলে আঙটিটি মহানদীতে (গ্রেট রিভার) তলিয়ে যায়। গলাম মাছ ধরতে গিয়ে সেই আঙটিটি খুঁজে পায়। আঙটিটির জন্য সে একটি খুন পর্যন্ত করে। হারিয়ে ফেলার আগে দীর্ঘকাল সে সেই আঙটিটি রেখে দেয় নিজের কাছে। তারপর আঙটিটি খুঁজে পান বিলবো ব্যাগিনস। আঙটিটির উৎস সম্পর্কে অবহিত না হয়েই বিলবোর থেকে এটি উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করে ফ্রোডো ব্যাগিনস। অন্যদিকে আঙটিটি খুঁজতে খুঁজতে গলাম মর্ডরে প্রবেশ করে। কিন্তু সাউরনের ভৃত্যেরা তাকে ধরে ফেলে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে। রিংরেইদরা বেরিয়ে পড়ে আঙটিটির সন্ধানে।
আঙটিটির ইতিহাস খানিকটা জেনে গ্যানডালফ ফ্রোডোকে উপদেশ দেন আঙটিটি নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে। ফ্রোডো তার অনুগত মালী স্যামওয়াইজ "স্যাম" গ্যামজি ও দুই তুতোভাই মেরি ও পিপিনকে সাহায্যার্থে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তাদের বিপজ্জনক পথে তারা নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হয়। রিংরেইদরা তাদের তাড়া করতে থাকে। অবশেষে তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন একাধিক চরিত্র। তাঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন ইসিলডুরের বংশধর তথা গনডোরের প্রকৃত রাজা ছদ্মবেশি অ্যারাগর্ন। ওয়েদারটপে রিংরেইদরা ফ্রোডোকে আহত করে। কিন্তু তার সঙ্গীরা রিভেনডেলের প্রভু এলরন্ডের সাহায্যে ফোর্ড অফ ব্রুইনেন-এ তাদের পরাজিত করে।
এলরন্ডের পরিচর্যায় ফ্রোডো সেরে ওঠে। দ্য কাউন্সিল অফ এলরন্ড সাউরন ও তার আঙটি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে। জানা যায় সারুমানের দুর্নীতিগ্রস্থতার কথাও। কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেয়, মরডোরে আঙটিটি নিয়ে গিয়ে ধ্বংস করাই একমাত্র উপায়। ফ্রোডো স্বেচ্ছায় আঙটিটি নিয়ে যেতে চায়। তাঁকে সঙ্গে যাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয় ফেলোশিপ অফ দ্য রিং।
ফ্রোডো ও তার সঙ্গীরা মোরিয়ার খনি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সেখানে একদল অর্ক তাদের আক্রমণ করে। একটি বালরগের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে গ্যানডালফ গভীর গর্তে পড়ে যান। অন্যরা পালিয়ে গিয়ে লথলরেনে আশ্রয় নেয়। লেডি গ্যালাড্রিয়েল তাদের নৌকা ও অন্যান্য উপহার দেন। এরপর মহানদী অ্যানডুইন ধরে তারা এসে উপস্থিত হয় অ্যামোন হেন-এ। সেখানে গনডোরের বর্তমান শাসকের উত্তরাধিকার বরোমির ফ্রোডোর থেকে আঙটিটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ফেলোশিপ ভেঙে যায়। ফ্রোডো কেবলমাত্র স্যামকে সঙ্গে নিয়ে মর্ডরের পথে যাত্রা করে।
দ্য টু টাওয়ার্স
[সম্পাদনা]বরোমিরকে হত্যা করে সারুমানের অর্করা মেরি ও পিপিনকে অপহরণ করে। অ্যারাগর্ন ও অন্যান্যরা অর্কদের পিছু ধাওয়া করে "গ্যানডালফ দ্য হোয়াইট"-বেশি গ্যানডালফের সাক্ষাৎলাভ করেন। অর্করা রোহিরিম কর্তৃক নিহত হলে মেরি ও পিপিন ফ্যানগর্ন অরণ্যে পালিয়ে গিয়ে এন্ট নামক বৃক্ষাকার জীবের সঙ্গে বন্ধুত্বস্থাপন করে। গ্যানডালফ অন্যান্যদের সঙ্গে যাত্রা করে রোহিরিমের রাজা থিয়োডেনকে সারুমানের সম্পর্কে অবহিত করেন। হেম’স ডিপে তাঁরা সারুমানের বাহিনীর মুখোমুখি হন। এরপর হর্নবার্গের যুদ্ধে সারুমানের বাহিনী পরাস্ত হয়।
মেরি ও পিপিন এন্টদের চালিত করে আইসেনগার্ডের অবশিষ্ট বাহিনীকেও ধ্বংস করে দেয়। গ্যানডালফ, থিয়োডেন ও অন্যান্যরা আইসেনগার্ড অভিমুখে যাত্রা করেন। সারুমান নিজের দোষ স্বীকারে অস্বীকার করলে গ্যানডালফ তাঁর পদ ও অধিকাংশ ক্ষমতা কেড়ে নেন। যে প্যালানটির বা দর্শনপ্রস্তরের মাধ্যমে সাউরন সারুমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, পিপিন সেই পাথরটি দেখে। সাউরন হবিটদের উপস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হন। গ্যানডালফ পিপিনকে গনডোরে নিয়ে আসেন।
ফ্রোডো আর স্যাম গলামকে বন্দী করে। গলাম তাদের মর্ডরের অভ্যন্তরে নিয়ে যেতে রাজি হয়। তারা এক দীর্ঘ পথ যাত্রা করে। মাঝে সামান্য সময়ের জন্য তাদের সাহায্য করে বরোমিরের ভাই ফারামির। ফ্রোডোর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে গলাম তাদের মিনাস মর্গালের উপরের একটি পাহাড়ি গুহায় শিলব নামে একটি বিরাট মাকড়সার কাছে নিয়ে যায়। শিলবের কামড়ে ফ্রোডো অচৈতন্য হয়ে পড়ে। স্যাম স্টিং ও গ্যালাড্রিয়েলের উপহার এরেনডিলের তারা-ভরা একটি শিশির মাধ্যমে শিলবকে দূর করে দেয়। স্যাম আঙটিটি নিয়ে নেয়। ফ্রোডোকে অর্করা সিরিথ আঙ্গলে নিয়ে যায়।
সাউরন গনডোর আক্রমণের উদ্দেশ্যে সামরিক অভিযান শুরু করেন। সর্বশ্রেষ্ঠ রিংরেইদ উইচ-কিং অফ অ্যাংমারের নেতৃত্বে একটি বিরাট বাহিনী গনডোরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
দ্য রিটার্ন অফ দ্য কিং
[সম্পাদনা]পরিকল্পিত আক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করতে পিপিনকে নিয়ে গ্যানডালফ উপস্থিত হন গনডোরের মিনাস টিরিথে। মেরি রোহানের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। অ্যারাগর্ন প্রেতবাহিনীতে (আনডেড আর্মি) স্বপক্ষে আনার জন্য অন্যান্যদের নিয়ে মৃতের সরণিতে (পাথস অফ দ্য ডেড) যাত্রা করে। গ্যানডালফ, অ্যারাগর্ন ও ফেলোশিপের অন্যান্যরা সাউরনের বাহিনীর বিরুদ্ধে পেলেনর মাঠের যুদ্ধে যোগ দেন। গনডোরের তৎকালীন শাসক ডেনেথর তাঁর দুই পুত্রকেই মৃত মনে করে আশাহত হয়ে আত্মহত্যা করেন। যথাসময়ে এসে উপস্থিত হয় রোহানের অশ্বারোহী বাহিনী ও অ্যারাগর্নের প্রেতবাহিনীও। ফলে সাউরনের বাহিনীর বৃহত্তর অংশই পরাজিত হয়। অ্যাংমারের উইচ-কিং থিয়োডেনের ভাতুষ্পুত্রী এওইন ও মেরি কর্তৃক নিহত হন।
মর্ডরের অভ্যন্তরে সাউরন এক বিরাট সেনাবাহিনীকে সংগঠিত করে তোলেন। প্রধান চরিত্রগুলি শেষ যুদ্ধ ব্ল্যাক গেটের যুদ্ধের পথে যাত্রা করে। গনডোর ও রোহানের সম্মিলিত বাহিনী এই আশা নিয়ে সাউরনের বাহিনীর বিরুদ্ধে মরিয়া যুদ্ধ শুরু করে যে এই যুদ্ধ ফ্রোডোকে আঙটিটি ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ করে দেবে।
স্যাম ফ্রোডোকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে। তারা মর্ডরের উপত্যকার মধ্য দিয়ে মাউন্ট ডুম-এ (ধ্বংস পর্বত) পৌঁছায়। ক্র্যাকস অফ দ্য ডুমে এসে আঙটিটি ফ্রোডোকে বশীভূত করে। সে নিজের জন্য আঙটিটি দাবি করে। গলাম আঙটিটির জন্য ফ্রোডোর সঙ্গে হাতাহাতি শুরু করে দেয়। সে ফ্রোডোর আঙুল শুদ্ধ আঙটিটি কেটে নেয়। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত পড়ে যায় আগুনে। আঙটিটি ধ্বংস হয়ে যায়। সাউরন পৃথিবী থেকে বিতাড়িত হন। তাঁর বাহিনী শক্তিহীন হয়ে পড়ে। রিংরেইদরা ধ্বংস হয়ে যায়। যুদ্ধ শেষ হয়।
গনডোরের রাজসিংহাসনে অভিষেক হয় অ্যারাগর্নের। তিনি এলরন্ডের কন্যা আরউইনকে বিবাহ করেন। সারুমান অরথ্যাংকে তাঁর বন্দীদশা থেকে পালিয়ে গিয়ে শায়ারকে দাসত্বপাশে আবদ্ধ করেন। ফিরতি পথে হবিটেরা তাঁকে পরাজিত করে। স্যাম গ্যালাড্রিয়েলের উপহারগুলি কাজে লাগিয়ে শায়ারকে পুনর্গঠিত করে তার সৌন্দর্যায়ন ঘটায়। তবে ফ্রোডো দেহে ও মনে আহত হয়েই থেকে যায়। শান্তির খোঁজে সে বিলবো ও গ্যানডালফের সঙ্গে সমুদ্রযাত্রা করে মৃত্যুহীন ভূমির (আনডাইং ল্যান্ড) উদ্দেশ্যে। অন্য তিন হবিট ঘরে ফিরে আসে।
পরিশিষ্ট
[সম্পাদনা]মূল কাহিনির সঙ্গে প্রদত্ত ছয়টি পরিশিষ্টে প্রচুর বাড়তি তথ্য উপাদান পাওয়া যায়।[৭] এই তথ্য উপাদান কাহিনিকে আরো সম্প্রসারিত করে। এর মধ্যে রয়েছে ঘটনার একটি কালপঞ্জি, বংশলতিকা, ক্যালেন্ডার, ব্যক্তিবর্গ ও টলকিনের আবিষ্কৃত ভাষার পরিচয়।
ধারণা ও সৃষ্টি
[সম্পাদনা]পটভূমি
[সম্পাদনা]১৯৩৭ সালে প্রকাশিত টলকিনের পূর্ববর্তী উপন্যাস দ্য হবিট-এর পরিপূরক উপন্যাস বা সিকোয়েল হিসেবে জে. আর. আর. টলকিন লর্ড অফ দ্য রিংস-এর রচনা শুরু করেন।[৮] দ্য হবিট উপন্যাসের ব্যবসায়িক সাফল্যের পর প্রকাশক জর্জ অ্যালেন অ্যান্ড আনউইন উক্ত উপন্যাসের একটি পরিপূরক উপন্যাস রচনা করার অনুরোধ রাখেন লেখকের কাছে। টলকিন তাদের সতর্কিত করে রাখেন যে তিনি অত্যন্ত ধীরে লিখবেন। এবং তাঁর রচনা হবে এযাবৎ লিখিত যাবতীয় রচনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অ্যালেন অ্যান্ড আনউইন সিলমারিলিওন ও রোভর্যান্ডম-এর সমসাময়িক খসড়াটি বাতিল করে ফার্মার গিলস অ্যান্ড হ্যাম-কে গ্রহণ করে। তারা ভেবেছিল হবিট সংক্রান্ত আরও গল্প জনপ্রিয়তা লাভ করবে।[৯] তাই পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে টলকিন একটি গল্পে হাত দেন, যেটি পরে দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস নামে পরিচিত হয়। বারো বছর পর ১৯৪৯ সালে উপন্যাস রচনার কাজ সমাপ্ত হয়। তবে ১৯৫৫ সালের আগে এর সম্পূর্ণাংশ প্রকাশিত হয়নি। যখন হয় তখন টলকিনের বয়স তেষট্টি।
প্রধান চরিত্রসমূহ
[সম্পাদনা]ভালো চরিত্র:
- ফ্রোডো ব্যাগিন্স, একজন হবিট, চাচা বিলবো ব্যাগিন্স কর্তৃক প্রাপ্ত 'ওয়ান রিং' এর বহনকারী।
- স্যামওয়াইজ গ্যামজি, বাগান পরিচর্যাকারী এবং ব্যাগিন্সদের পারিবারিক বন্ধু। ফ্রোডোর বেস্ট ফ্রেন্ড।
- মেরিয়াডক ব্র্যান্ডিবাক (মেরি), ফ্রোডোর কাজিন ও বন্ধু।
- পেরেগ্রিন টুক (পিপ বা পিপিন), ফ্রোডোর কাজিন ও বন্ধু।
- গ্যানডালফ, (ওলোরিন বা মিথরান্ডির) একজন জাদুকর। প্রকৃতপক্ষে 'মায়ার' বা 'ইস্তারি' নামক ঐশ্বরিক দূত, যাকে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ফেরেস্তা সদৃশ 'ভালার'রা মিডল-আর্থে প্রেরণ করেছে ডার্ক লর্ড সাউরন এর সাথে যুদ্ধ করার জন্য। সে এলফদের 'রিং অফ ফায়ার' বহনকারী। এ আংটিটি এলফদের নেতা কিরডান অফ দ্য গ্রে হ্যাভেন্স তাকে দিয়েছিল।
- অ্যারাগর্ন, (এলেসার বা স্ট্রাইডার), অ্যারাথর্নের পুত্র, ইসিলডুর এর উত্তরাধিকারী, এবং মনুষ্য রাজ্য আরনর ও গনডর এর সিংহাসনের প্রকৃত দাবীদার।
- লেগোলাস গ্রিনলিফ, একজন এলফ যুবরাজ এবং মার্কউড নামক এলফ রাজ্যের রাজা থ্রানডুইল এর পুত্র ও উত্তরাধিকারী।
- গিমলি, গ্লোইনের পুত্র, একজন ডুয়ার্ফ।
- ডিনেথর, গনডর এর বর্তমান শাসক, মিনাস টিরিথের লর্ড।
- বরোমির, ডিনেথর এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ও উত্তরাধিকারী।
- ফারামির, ডিনেথর এর কনিষ্ঠ পুত্র ও বরোমির এর ছোট ভাই, ইওয়াইনের স্বামী।
- গ্যালাড্রিয়েল, এলফ রাজ্য লোরিয়েন এর রাণী, আরওয়েন উন্ডোমিয়েল (আরওয়েন ইভেনস্টার) এর মাতামহী। এলফদের তিনটি আংটির মধ্যে একটির বাহক।
- কেলেবর্ন, এলফ রাজ্য লোরিয়েনের রাজা, গ্যালাড্রিয়েলের স্বামী ও আরওয়েনের মাতামহ।
- এলরন্ড, হাফ-এলফ, এলফ রাজ্য রিভেনডেল (এডোরাস) এর লর্ড (রাজা) ও আরওয়েনের পিতা। এলফদের অন্য একটি আংটির বাহক।
- আরওয়েন, লর্ড এলরন্ডের কন্যা, অ্যারাগর্নের স্ত্রী।
- বিলবো ব্যাগিন্স, ফ্রোডোর চাচা।
- থিওডেন, মনুষ্য রাজ্য রোহান এর রাজা, গনডর এর মিত্র, এবং থিওড্রেডের পিতা।
- ইওমার, থিওডেনের ভগ্নীপুত্র এবং মার্কের তৃতীয় মার্শাল। থিওডেনের মৃত্যুর পর রোহানের রাজা।
- ইওয়াইন, ইওমারের ছোট বোন, মামা থিওডেনের সাথে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য ডার্নহেল্ম নামক পুরুষ যোদ্ধার ছদ্মবেশ ধারণকারী, ফারামিরের স্ত্রী।
- ট্রিবিয়ার্ড, (ফ্যাংগর্ন) সবচেয়ে বয়স্ক ও প্রাচীনতম এন্ট।
খলচরিত্র:
- সাউরন, ডার্ক লর্ড এবং লর্ড অফ দ্য রিংস এর টাইটেলধারী লর্ড। কালোজাদু দ্বারা প্রভাবিত মায়া, এলফদের রিংস অফ পাওয়ার তৈরির অন্যতম প্রধান কারিগর, ওয়ান রিং এর প্রকৃত মালিক। প্রথম যুগে মরগথ এর প্রধান সেনাপতি ছিল।
- নাজগুল বা রিংড়েইথস, মানুষদের প্রাচীন রাজা, যারা সাউরনের আংটিসমূহ প্রাপ্ত হয়েছিল এবং এইসব আংটিসমূহ তাদেরকে সাউরনের দাসে পরিণত করে।
- উইচ-কিং অফ আংমার, লর্ড অফ দ্য নাজগুল (নাজগুলদের প্রধান), এবং সাউরনের সবচেয়ে শক্তিশালী ভৃত্য। সাউরনের আর্মির কমান্ডার।
- সারুমান, জাদুকরদের সাবেক প্রধান যে ওয়ান রিংটি পেতে চায়। পালানটির দ্বারা সাউরনের কালো জাদুর মোহে আচ্ছন্ন। গ্যানডালফের মতো সারুমানও একজন মায়ার বা ইস্তারি।
- গ্রিমা ওয়ার্মটাং, সারুমানের ভৃত্য, রোহানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতাকারী।
- গোলাম, স্মিয়াগল নামক রিভার-হবিট, ওয়ান রিং দ্বারা করাপ্টেড।
- শেলোব, মিনাস মরগুলের পথে বসবাসকারী দৈত্যাকার মাকড়শা।
- বালরগ, খাজাদ-দুম (মরিয়া) নামক ডুয়ার্ফ রাজ্যের তলদেশে বসবাসকারী অগ্নি-দৈত্য
চলচ্চিত্রায়ন
[সম্পাদনা]দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস উপন্যাস থেকে তিনটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ছবিগুলো পরিচালনা করেছেন নিউজিল্যান্ডের বিখ্যাত পরিচালক পিটার জ্যাকসন। বাণিজ্যিকভাবে সফল এবং সমালোচকদের কাছে বিশেষ প্রশংসিত এই ছবিগুলো হচ্ছে: দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস: দ্য ফেলোশিপ অফ দ্য রিং, দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস: দ্য টু টাওয়ারস এবং দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস: দ্য রিটার্ন অফ দ্য কিং
বাংলা অনুবাদ
[সম্পাদনা]"দি লর্ড অফ দ্য রিংস" উপন্যাস টির প্রথম খণ্ড "দি ফেলোশিপ অব দ্য রিং" এর প্রথম বাংলা অনুবাদ বের হয় ২০০৬ সালে "অমর একুশে গ্রন্থ মেলায়"। ভাষান্তর করেন মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন,প্রকাশিত হয় ঐশী পাবলিকেশন্স নামের একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে।[১০]
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ "World War I and World War II"। ২০০৬-০৬-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-১৬।
- ↑ "Tolkien FAQ: How many languages have The Hobbit and The Lord of the Rings been translated into?"। ৩০ মে ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০০৯।
- ↑ "J. R. R. Tolkien: A Biographical Sketch"। ২০০৬-০৩-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-১৬।
- ↑ ""Influences of Lord of the Ring""। ১৩ জুন ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০০৯। অজানা প্যারামিটার
|accessdaymonth=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|accessyear=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ Gilliver, Peter (২০০৬)। The Ring of Words: Tolkien and the Oxford English Dictionary। Oxford University Press। আইএসবিএন ০-১৯-৮৬১০৬৯-৬।
- ↑ "Celebrating Tolkien: Elvish Impersonators"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-০৩। line feed character in
|শিরোনাম=
at position 21 (সাহায্য) - ↑ "The Return of the King: Summaries and Commentaries: Appendices"। ২০০৬-০২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-১৬।
- ↑ "The Lord of the Rings: Genesis" (পিডিএফ)। ২০০৬-০৭-২৪ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৬-১৪।
- ↑ Carpenter 1977, পৃ. 195
- ↑ বাংলা অনুবাদ বাংলা একাডেমী "অমর একুশে বই মেলা ২০০৬" ঃ প্রকাশিত বই এর তালিকা
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- Wayne G. Hammond and Christina Scull, The Lord of the Rings: A Reader's Companion (2005), আইএসবিএন ০-৬১৮-৬৪২৬৭-৬.
- Christina Scull and Wayne G. Hammond, The J. R. R. Tolkien Companion and Guide (2006), আইএসবিএন ০-৬১৮-৩৯১১৩-৪ .
- Christopher Tolkien (ed.), The History of The Lord of the Rings, 4 vols (1988–1992).
- Lin Carter, Tolkien: A Look Behind "The Lord of the Rings" (1969)
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- The official Tolkien website
- Official The Lord of the Rings publisher website ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে
- The Lord of the Rings wiki on Wikia
- ইন্টারনেট বুক লিস্টে The Lord of the Rings (ইংরেজি)
- টেমপ্লেট:Http://www.banglaacademy.org.bd/
টেমপ্লেট:J. R. R. Tolkien টেমপ্লেট:Lotr টেমপ্লেট:Middle-earth