তাহিরপুর উপজেলা
তাহিরপুর | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে তাহিরপুর উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৫′৩০″ উত্তর ৯১°১০′৩০″ পূর্ব / ২৫.০৯১৬৭° উত্তর ৯১.১৭৫০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | সিলেট বিভাগ |
জেলা | সুনামগঞ্জ জেলা |
সরকার | |
• জাতীয় সংসদ সদস্য | রঞ্জিত সরকার |
আয়তন | |
• মোট | ৩৩৬.৭০ বর্গকিমি (১৩০.০০ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ১,৫৫,১৯৮ |
• জনঘনত্ব | ৪৬০/বর্গকিমি (১,২০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | % |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৩০৩০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৬০ ৯০ ৯২ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
তাহিরপুর বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত লাউড়ের পাহাড়ের নামানুসারে পৌরাণিক যুগের লাউড় রাজ্যের কালের সাক্ষি এই তাহিরপুর উপজেলা । তাহির পুর উপজেলায় অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর। যাহা বাংলাদেশের নির্বাচনী এলাকাঃ ২২৪ সুনামগঞ্জ -০১ এ অবস্থিত ।[২]
অবস্থান ও আয়তন
[সম্পাদনা]এই উপজেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা, পশ্চিমে মধ্যনগর উপজেলা।
প্রশাসনিক এলাকা
[সম্পাদনা]তাহিরপুর উপজেলায় বর্তমানে ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম তাহিরপুর থানার আওতাধীন।[৩]
- ১নং শ্রীপুর উত্তর
- ২নং শ্রীপুর দক্ষিণ
- ৩নং বড়দল দক্ষিণ
- ৪নং বড়দল উত্তর
- ৫নং বাদাঘাট
- ৬নং তাহিরপুর
- ৭নং বালিজুরি
ইতিহাস
[সম্পাদনা]খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত লাউড়ের পাহাড়ের নামানুসারে পৌরাণিক যুগের লাউড় রাজ্যের কালের সাক্ষি এই তাহিরপুর উপজেলা । যাহা বাংলাদেশের নির্বাচনী এলাকা: ২২৪ সুনামগঞ্জ -০১ এ অবস্থিত । কিংবদন্তি এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও তথ্যাবলী থেকে জানা যায়, অতি প্রাচীনকালে বাংলার এক বিশাল ভূখণ্ড কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল[২][৪]। এবং এর রাজধানীর নাম ছিল প্রাগজ্যোতিষপুর। কামরূপ রাজ্যের শাসক ছিলেন রাজা ভগদত্ত । ঐতিহাসিকদের মতে সুনামগঞ্জের লাউড় পাহাড়ে রাজা ভগদত্তের উপরাজধানী ছিল। জনশ্রুতি ও পুরাকীর্তি ইত্যাদির ভিত্তিতে বলা হয় লাউড় সিলেটের প্রাচীন রাজ্য, যা বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার আওতায় পড়ে। পুরাকীর্তিসূত্রে ধারণা করা হয়, মহাভারত যুদ্ধে নিহত রাজা ভগদত্তের পরে তাঁর বংশীয় ১৯ জন ঐতিহাসিক নৃপতি লাউড় অঞ্চলে রাজত্ব করেছেন। নিধনপুরের তাম্রলিপি সূত্রে বলা হয় ভাস্করবর্মন খ্রিস্টীয় ৬৫০ অব্দ পর্যন্ত এ অঞ্চলের রাজত্ব করেন। পৌরাণিক যুগে শ্রীহট্ট ভূমী এ রাজ্যে গণ্য ছিল। লাউড় রাজ্যের চতুসীমা ছিল পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ, পূর্বে জৈন্তিয়া, উত্তরে কামরূপ সীমান্ত ও দক্ষিণে বর্তমানে ব্রাম্মণবাড়িয়া পর্যন্ত। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর পরবর্তী সময়ে সিলেট অঞ্চলের ভৌগোলিক রুপরেখার পরিবর্তন ঘটলে লাউড় রাজ্যের সীমানা বর্তমান সমগ্র সুনামগঞ্জ জেলা, হবিগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার কিয়দাংশে সীমা বিস্তার হয়।[২] বঙ্গের রাজা হর্ষবর্মনের (রাজত্বকাল, ৭৩০-৭৫০) রাজত্ব কালে ব্রহ্মপুত্র পরবর্তী সমস্ত রাজ্যসমুহে বিরাট ধরনের অরাজকতা সৃষ্টির অভিমত[৫] রয়েছে। এসময় সমস্ত বঙ্গদেশ ভিন্ন ভিন্ন খণ্ড রাজ্যে বিভক্ত হয়[৪] এবং তখন সিলেটের প্রাচীন লাউড় রাজ্য কামরূপ থেকে বিভক্ত হয়ে একটি পৃথক স্বাধীন রাজ্য পরিণত হয়। দশম শতাব্দীতে লাউড়, গৌড় ও জয়ন্তীয়া এই তিন রাজ্যে বিভক্ত ছিল সিলেট। পরবর্তীকালে (দ্বাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে) বিজয় মাণিক্য নামে জনৈক হিন্দু রাজা লাউড় রাজ্যে রাজত্ব করেন। এসময় রাজা বিজয় মাণিক্যের লাউড় রাজ্যের সীমানা বর্তমান সমগ্র সুনামগঞ্জ জেলা ও ময়মনসিংহ জেলা এবং হবিগঞ্জ জেলার কিয়দাংশ নিয়ে গঠিত ছিল। দ্বাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে রাজা বিজয় মাণিক্য জগন্নাথপুর উপজেলার পান্ডুয়ায় (বর্তমানে পেরুয়া) একটি শাখা রাজ্য স্থাপন করেন। যার নামকরণ করা হয় পান্ডুয়া রাজ্য । বিজয় মাণিক্যর পরে লাউড় ও জগন্নাথপুর রাজ্যে কে বা কারা শাসক ছিলেন তা অজ্ঞাত। তেরশত শতাব্দীর পর চৌদ্দ'শ সালের প্রথমার্ধে কাত্যায়ন গোত্রিয় রাজা দিব্য সিংহ নামে নৃপতি লাউড়ে রাজত্ব করেন। তখন লাউড়ের রাজধানী নবগ্রামে স্থানান্তর হ্য়। এ সময় লাউড় এবং জগন্নাথপুর রাজ্য অনেক জ্ঞানী পুরুষের আবির্ভাবে প্রফুল্লিত হয়েছিল। রাজ্যের রাজমন্ত্রী কুবেরাচার্য ছিলেন একজন সুপণ্ডিত ব্যক্তি। যার জ্ঞানের চর্চা ভারতবর্ষের অন্যতম বিদ্যাপীঠ নবদ্বীপ পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত ছিল। এছাড়া উক্ত রাজ্যের নবগ্রামে মাধবেন্দ্রপুরী নামে আরেক জন জ্ঞানী সাধু পুরুষ বসবাস করতেন। এই মাদেবন্দ্রপুরির কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করে লাউড়ের যুবরাজ রমানাথ বা রামা ও মন্ত্রীতনয় অদ্বৈত্যেচার্য সারা ভারতবর্ষে স্মরণীয় হয়ে আছেন। রমানাথ সিংহ উপযুক্ত হলে রাজা দিব্য সিংহ রাজ্যভার তাঁর পুত্র রমানাথকে দিয়ে, শান্তি সাধনায় তিনি তাঁর মন্ত্রীতনয় অদ্বৈত্যের আখড়া শান্তিপুরে চলে যান। সেখানে থেকে অদ্বৈত্যের উপদেশে বৈষ্ণবীধর্ম গ্রহণ করেন এবং সাহিত্য চর্চায় মনোযুগী হয়ে বাংলা ভাষায় বিঞ্চুভক্তি শাস্ত্র গ্রন্থ সহ আরও কয়েকটি গ্রন্থের অনুবাদ করেন। অতপর অদ্বৈত্য বাল্যলিলা গ্রন্থ রচনা করে কৃষ্ণদাস নামে আখ্যাত হন।[২] এই তাহিরপুরে লাউড় রাজ্যের রাজধানীর দুর্গ ও প্রাচীরই ভগদত্ত রাজার স্থাপিত রাজ্যে প্রমাণ হিসেবে ঐতিহাসিক অচ্যুতচরণ সহ প্রায় সকলেই উল্লেখ করেছেন। রাজা ভগদত্ত মহাভারতের যুদ্ধে সৈন্য পাঠিয়ে সাহায্য করেছিলেন বলেও তথ্য রয়েছে শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ইতিহাস গ্রন্থে । মহাভারতের প্রথম বাংলায় অনুবাদকারী মহাকবি সঞ্জয়ের নিবাসও এই এলাকায়। মহাকবি সঞ্জয় তার লেখায় বারবার রাজা ভগদত্তের কথা লিখেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনিন্দ্র বসু যে গবেষণা করেছেন, সেখানে তিনি বারবার ভগদত্ত ও লাউড়ের রাজার কথা উল্লেখ করেছেন । বিভিন্ন তথ্য সুত্রে জানা যায়, উপজেলার উত্তর বড়দল ও দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান হলহলিয়া গ্রামে এক কালের প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল। প্রায় পঞ্চদশ শতাব্দির কালে রামানাথের পুত্র কেশব সিংহ তথায় রাজা হন। লেখক সৈয়দ মুর্তজা আলী তার রচিত ‘হযরত শাহ্জালাল ও সিলেটের ইতিহাস’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রি.) লাউড়ের রাজা গোবিন্দ সিংহ তার জ্ঞাতি ভ্রাতা জগন্নাথপুরের রাজা বিজয় সিংহের সঙ্গে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হয়েছিলেন। পরে রাজা বিজয় সিংহ গুপ্ত ঘাতকের হাতে নিহত হন। তখন ঐতিহাসিক লাউড় রাজ্যের রাজধানী সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ‘হলহলিয়ায়' ছিল, এখানকার ধ্বংসাবশেষও তাই জানান দিচ্ছে। প্রায় শতের'শ শতকের শেষের দিকে গোবিন্দ খাঁ কর্তৃক শ্রীহট্ট ভূমির প্রাচীন রাজ্য "লাউড়" ইহার অধিকার ভূক্ত হয়। যাহা মূলত তৎকালে জগন্নাথপুর রাজ্যের রাজ্ বংশের অধিকারে আসার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশতঃ জগন্নাথপুর রাজ্যের রাজ্ বংশ তাদের অধিকার হারায় এবং ইহার জের ধরে দুই রাজ্যের মধ্যে হতা-হতীর কারণ জগন্নাথপুর রাজ্যের রাজ্ বংশ ধংশ হয়। ঐ সময়ে বানিয়াচং রাজা গোবিন্দ খাঁ দিল্লীর সম্রাটদের দ্বারা মুসলমান হয়ে, হাবিব খাঁ নাম ধারণ করে দেশে ফিরেন। শতরে'শ শতকের পরে লাউড় রাজ্য স্বাধীনতা হারায় এবং মোঘলরা এর নিয়ন্ত্রক হন।[৬] ইতিহাস পাঠে জানা যায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর জমিদারী এস্টেটের অধিনে ছিল তাহিরপুর । অতিতে তাহিরপুর নামে কোন গ্রাম ছিলনা । নিম্ন বর্ণের হিন্দুরাই এই এলাকার বাসিন্দা ছিল । জনশ্রুতি আছে যে,স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিচারে জনৈক তাহির আলী নামক একজন মুসলমান ব্যক্তি দোষী সাব্যস্থ হন এবং নিজ এলাকা ত্যাগ করে বর্তমান তাহিরপুর এলাকায় বসতি স্থাপন করেন । কালের প্রবাহে তাহির আলীর নামেই এলাকার নাম করণ করা হয় ।[৭] ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে সুনামগঞ্জকে মহকুমায় উন্নীত করা হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রশারে ১৯২৪ সালে তাহিরপুর থানা গঠিত হয় । পরবর্তীকালে উন্নীত থানা পরিষদকে উপজেলা পরিষদে রূপান্তরিত করা হয়। এ সময়ে বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত উপজেলাকে পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক কেন্দ্রে রূপ দেয়া হয়। এই অধ্যাদেশটি ১৯৯১ সালে বাতিল করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯৮ সালে জাতীয় সংসদে উপজেলা অধ্যাদেশ ১৯৯৮ পাস করে পুনরায় উপজেলা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়। কার্যালয় আদেশের মাধ্যমে ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ থেকে এই অধ্যাদেশ কার্যকরী হয়। সেই থেকে তাহিরপুর থানা তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ হিসেবে রূপান্তরিত হয় ।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালে তাহিরপুর সংলগ্ন খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে শরণার্থী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ১৯৯৭-৯৮ সালে ভাসান পানি আন্দোলনে ১০ জন কৃষক প্রাণ হারায় এবং আরও অনেকে কারারুদ্ধ হয়।
জনসংখ্যার উপাত্ত
[সম্পাদনা]জনসংখ্যা ১৫৫১৮৮; পুরুষ ৮০৫৩৭, মহিলা ৭৪৬৫১। মুসলিম ১৪০১১১, হিন্দু ১৪৩৬২, বৌদ্ধ ৫৭৮, খ্রিস্টান ২৩ এবং অন্যান্য ১১৪। এ উপজেলায় আদিবাসী গারো, হাজং প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
শিক্ষা
[সম্পাদনা]শিক্ষার গড় হার ৩১.২%; পুরুষ ৩৬.২%, মহিলা ২৫.৯%। শিক্ষা ক্ষেত্রে তাহিরপুর উপজেলার অগ্রগতি খুব কম। এই উপজেলায় দুটি কলেজ রয়েছে। একটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাত্র দুটি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়, কওমী মাদ্রাসা, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা, দাখিল মাদ্রাসা,আলিম মাদ্রাসা ও অন্যান্য শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
অর্থনীতি
[সম্পাদনা]কথায় আছে, মৎস-পাথর-ধান হলো সুনামগঞ্জের প্রাণ। আর এই মৎস-পাথর-ধান এর অন্যতম যোগানদাতা হলো তাহিরপুর উপজেলা। সুতরাং, এ উপজেলার অর্থনীতির অন্যতম উৎস এসব। বিশেষ করে হাওড়ের বোরো ধান হলো প্রধান উৎস। আর এর পরে রয়েছে হাওরের মাছ। নদীতেও প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। তাহিরপুর উপজেলার ফাজিলপুরের বালি দেশ বিখ্যাত ও দেশের একমায়ত্র চুনাপাথর খনি রয়েছে এ উপজেলায়। এক কথায় তাহিরপুর উপজেলাটি মৎস,পাথর,বালু ও ধানের জন্য বিখ্যাত, এছাড়াও বেশ কয়েক বছর আগে চালু হওয়া কয়লা আমদানীও অর্থনীতিতে ব্যাপক ভুমিকা রেখেছে। দরিদ্র শ্রেণীর লোকেরা নদীতে মাছ ধরে, পাথর আহরণ করে, বালু তুলে কিংবা ধানি জমিতে কাজ করে জিবীকা নির্বাহ করে। কৃষি প্রধান পেশা হলেও- ইদানীং ব্যবসা-বাণিজ্যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে খুব। মূলত, ধান চাষ প্রকৃত নির্ভতা থাকায় বছরের জলের কমতি-বাড়িতিতেও এ উপজেলার লোকেদের ভাগ্য উঠানামা করে। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৮.০৫%, অকৃষি শ্রমিক ৭.৫৩%, শিল্প ০.৩৫%, ব্যবসা ১১.৫৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.০৭%, চাকরি ২.৩০%, নির্মাণ ০.৫৭%, ধর্মীয় সেবা ০.৩২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২২% এবং অন্যান্য ৮.০৩%। কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৩৪%, ভূমিহীন ৪০.৬৬%। শহরে ৬০.৮৪% এবং গ্রামে ৫৯.২৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে। প্রধান কৃষি ফসল ধান, বাদাম, গম, সরিষা। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, কাউন। প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, লেব, তরমুজ। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য খামার ১০, গবাদিপশু ২০, হাঁস-মুরগি ৭০। যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ২০১ কিমি। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি। কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ। হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ২। বাদাঘাট বাজার, তাহিরপুর বাজার, বালিজুরি বাজার ও আনোয়ারপুর বাজার এবং পণাতীর্থ বারুণী মেলা (রাজারগাঁও) ও শাহ আরেফিন মেলা (লাউড়েরগড়) উল্লেখযোগ্য। প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, মাছ, চুনাপাথর। বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩.৯৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
জলাশয়
[সম্পাদনা]প্রধান নদী: বাউলাই, রক্তি ও পাটনাল। টাঙ্গুয়ার হাওড়, মতিয়ান বিল, সংসার বিল, আরবিয়াকোনা বিল, রাউয়ার বিল, সোনার বিল, চিপতি বিল, সোনাতলা বিল, পালাইর বিল, ঘরিয়াকুরী বিল, বটকাই বিল, শৈলদিঘা বিল, নাবাই বিল, কুপাউড়া বিল, গোলাঘাট বিল উল্লেখযোগ্য।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
[সম্পাদনা]- অদ্বৈত আচার্য - বৈষ্ণব সাধক;
- শাহেদ আলী- কালজয়ী কথাশিল্পী ও ভাষাসৈনিক;
- আল্লামা মুফতি নেসার আহমদ (ঘাগটিয়া) সুপরিচিত দেওবন্দ-গ্রাজুয়েট আলেম ও প্রখ্যাত ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞ;
- মকবুল হোসেন চৌধুরী- বিখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ;
- হাসান শাহরিয়ার- সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
দর্শনীয় স্থানসমূহ
[সম্পাদনা]- পনাতীর্থ স্নান
- হাওলি জমিদার বাড়ি
- শহীদ সিরাজ লেক
- টাঙ্গুয়ার হাওর
- যাদুকাটা নদী
- বারেক টিলা
- শিমুল বাগান
- শনির হাওর
- হাওর বিলাস
- সুখাইড় জমিদার বাড়ি
- পাহাড় বিলাস
- হাসন রাজা মিউজিয়াম
- হযরত শাহ আরেফিন রহঃ এর আস্তানা
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৫।
- ↑ ক খ গ ঘ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূর্বাংশ, দ্বিতীয় ভাগ, প্রথম খণ্ড, প্রথম অধ্যায়, অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি; প্রকাশক: মোস্তফা সেলিম; উৎস প্রকাশন, ২০০৪।
- ↑ "ইউনিয়নসমূহ - তাহিরপুর উপজেলা"। tahirpur.sunamganj.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০২০।
- ↑ ক খ Ancient India" Ramesh Chandra Majumdar, Chapter 3, p267, Motilal Banarsidass Publishers, Eighth Edition: Delhi, 1977
- ↑ সুহাস চট্টোপাধ্যায়ের "ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি", "উত্তর-পূর্ব ভারতের সংস্কৃতি, (কামরূপ)" পৃষ্ঠা: ৪৩০, এম ডি প্রকাশনা, নতুন দিল্লী, ১৯৯৮।
- ↑ sylheterdak.com.bd[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "tahirpur.sunamganj.gov.bd"। ২১ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই ২০২১।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |